হামলাকারীদের শনাক্তে আগ্রহ নেই পুলিশের

পল্লবীর কালশী এলাকায় আতশবাজি পোড়ানোকে কেন্দ্র করে আগুন দেওয়ার  ঘটনায় নয়জন নিহত হন। স্বজনদের শোকে কাঁদছেন একজন।  ফাইল ছবি
পল্লবীর কালশী এলাকায় আতশবাজি পোড়ানোকে কেন্দ্র করে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নয়জন নিহত হন। স্বজনদের শোকে কাঁদছেন একজন। ফাইল ছবি
>
  • বিহারি ক্যাম্পে নয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার চার বছর
  • এ ঘটনায় মামলা হয় ছয়টি
  • আসামি ৩ হাজার ৭১৪ জন

চার বছর আগে রাজধানীর পল্লবীর কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পে হামলা, লুটপাট, পুড়িয়ে ও গুলি করে ১০ জনকে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছিল ৬টি। এর মধ্যে ২ মামলার বাদী পুলিশ, বাকি ৪ মামলার বাদী পুলিশের ‘পছন্দের লোক’। এসব মামলায় নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আসামি ৩ হাজার ৭১৪ জন। তাঁরা সবাই হামলার শিকার হওয়া ক্যাম্পেরই বাসিন্দা।
ক্যাম্পবাসীর অভিযোগ, একই পরিবারের ৯ জনকে পুড়িয়ে মারাসহ ১০ জনকে হত্যায় স্থানীয় যুবলীগের নেতা, তাঁর সমর্থক এবং পুলিশ জড়িত। তাই হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পুলিশের আগ্রহ নেই। উল্টো ক্যাম্পের বাসিন্দাদের আসামি করে দুই মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
আতশবাজি পোড়ানো নিয়ে ২০১৪ সালের ১৩ জুন পবিত্র শবে বরাতের রাতে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের (আটকে পড়া পাকিস্তানি) সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পাশের পল্লবী থানা যুবলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানার সমর্থকেরাও পুলিশের সঙ্গে যোগ দেন। পরদিন সকালে (১৪ জুন) ক্যাম্পের ৮টি ঘরে বাইরে থেকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে একটি ঘরের বাসিন্দা মো. ইয়াছিনের পরিবারের নারী-শিশুসহ ৯ জন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যায়। গুলিতে নিহত হন ক্যাম্পের বাসিন্দা কারচুপিশ্রমিক মো. আজাদ। ইয়াছিনের এক মেয়ে ফারজানা আক্তার প্রাণে বাঁচলেও গুরুতর দগ্ধ হয়। ইয়াছিন তখন ঘরে ছিলেন না। ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পল্লবীর পূরবী সিনেমা হলের সামনে দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে মারা যান তিনি।
ওই ঘটনার বিষয়ে উর্দু স্পিকিং পিপলস ইয়ুথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্টের সভাপতি মো. সাদাকাত খান প্রথম আলোকে বলেন, হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ এবং অনেকের নাম পুলিশকে দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশ কিছুই করেনি। বিহারি ও ভিন্ন ভাষার মানুষ হওয়ায় তাঁরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
১০ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ সকাল ১০টায় কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পের সামনে মানববন্ধনের কর্মসূচি দিয়েছেন ক্যাম্পবাসী। এতে এই ক্যাম্প ছাড়া মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প, মিরপুর ১০, ১১ ও ১২ নম্বর সেকশনের বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দারা অংশ নেবেন।
আটকে পড়া পাকিস্তানিদের সংগঠন স্ট্রান্ড্রেড পাকিস্তানিজ জেনারেল রিপেট্রিয়েশনের (এসপিজিআরসি) কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পের সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন বলেন, যুবলীগের নেতা জুয়েল রানার নেতৃত্বে যাঁরা আগুন দিয়ে ৯ জনকে পুড়িয়ে মেরেছেন, তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের কাউকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেননি। অন্যদিকে মিথ্যা মামলার খড়্গ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জুয়েল রানা প্রথম আলোকে বলেন, হামলা, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
১০ হত্যার ঘটনায় মামলা করতে চাইলেও পল্লবী থানা মামলা নেয়নি বলে জানান এসপিজিআরসির যুগ্ম সম্পাদক খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, একজন ছাড়া পরিবারের সবাইকে হারানো ইয়াছিনকে বাদী করে আদালতে মামলা করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু মামলা করার দুদিন আগে ইয়াছিনকেও বাসচাপা দিয়ে মেরে ফেলা হয়। এর পর থেকে সবাই ভয় পাচ্ছেন। পুলিশ মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে মাঝেমধ্যে ক্যাম্পবাসীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায় বলেও দাবি করেন তিনি।