সুমন জাহিদের দ্বিখণ্ডিত লাশ পাওয়া যায় রেললাইনে

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বাগিচা–সংলগ্ন রেললাইন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদের (৫৫) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ রেললাইন থেকে সুমনের দ্বিখণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে।

সুমন জাহিদ সবশেষ ফারমার্স ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। সুমন জাহিদের একজন ঘনিষ্ঠ স্বজন কাজী মো. বখতিয়ার টুইংকেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্দেহ করছি হত্যা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার পর থেকে ওকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। পুলিশ জানত। নিরাপত্তাও দেওয়া হচ্ছিল। পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলাফেরারও পরামর্শ দিয়েছিল।’

সুমন জাহিদ
সুমন জাহিদ

ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। লাশের পিঠে, মাথায়, মুখের সামনে, গালে ও নাকে আঘাতের চিহ্ন আছে। তবে মনে হচ্ছে শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়েছে ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে। সুমনকে অজ্ঞান করে রেললাইনের ওপর রেখে গেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল মাহমুদ বলেন, হতে পারে। তিনি বলেন, ভিসেরা ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন একসঙ্গে করে এরপর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তখন নিশ্চিত হওয়া যাবে কীভাবে মারা গেছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুমন জাহিদের মরদেহ। ছবি: আবদুস সালাম
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুমন জাহিদের মরদেহ। ছবি: আবদুস সালাম

রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, সুমনের মৃতদেহ রেললাইনের ওপর পড়েছিল। শাহজাহানপুর রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশে যাঁরা থাকেন, তাঁরা প্রায়ই সুমনকে এই এলাকায় দেখতেন।

জানা গেছে, সুমন জাহিদের বাসাও শাহজাহানপুরেও।

শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূর বলছিলেন, আট বছর বয়সে মাকে হারানোর পর সুমনের সংগ্রামের শুরু। জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে তিনি একসময় ঢাকা শহরে বেবিট্যাক্সি চালিয়েছেন। তিনি এত দুর্বল লোক নন যে রেললাইনের নিচে মাথা দেবেন।

ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন সোহেল মাহমুদ। ছবি: প্রথম আলো
ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন সোহেল মাহমুদ। ছবি: প্রথম আলো

সুমন জাহিদ স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন। বড় সন্তান উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে ও ছোটটি নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। সুমন শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের একমাত্র ছেলে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের তিন দিন আগে সেলিনা পারভীনকে বাসা থেকে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসররা। চৌধুরী মঈনুদ্দীনের নির্দেশে সেলিনা পারভীনকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছিলেন। দুজনই এখনো পলাতক। চৌধুরী মঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে এবং আশরাফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।