বন্যা-ভূমিধসের মুখে রোহিঙ্গা শিবির

ভারী বৃষ্টিতে ধসে পড়েছে ঘরের এক পাশ। ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে গেছে চালা। মেরামতের চেষ্টা করছেন গোলজার বেগম। টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরে গতকাল দুপুরে।  ছবি: গিয়াস উদ্দিন
ভারী বৃষ্টিতে ধসে পড়েছে ঘরের এক পাশ। ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে গেছে চালা। মেরামতের চেষ্টা করছেন গোলজার বেগম। টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরে গতকাল দুপুরে। ছবি: গিয়াস উদ্দিন

গত মার্চ থেকে দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে বলা হচ্ছিল, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় জুন থেকে বৃষ্টির বিপদ শুরু হবে। দেশের অন্যতম বৃষ্টিপ্রধান ওই এলাকায় ১ লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা বন্যা ও ভূমিধসের বিপদে আছে। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ যেতে না যেতেই সেখানে সেই আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নিল। গত এক সপ্তাহে টেকনাফ-উখিয়ায় ৪৪৬ মিলিমিটারের বৃষ্টিতেই রোহিঙ্গা শিবিরে ভূমিধস শুরু হয়ে গেছে। গতকাল বুধবার উখিয়ায় ভূমিধসে চারজন আহত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আর ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উজানে ভারতীয় অংশেও প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে কক্সবাজার এলাকায় হঠাৎ বা আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা করছে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ফলে রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

যদিও বিপর্যয়ের আশঙ্কায় থাকা রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগকে এখনো নিরাপদ স্থানে সরানো হয়নি। জুনের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে হাতিয়ার কাছে ভাসানচরে নেওয়ার কথা ছিল। তা-ও শুরু হয়নি। ফলে প্রায় প্রতিদিন ওই এলাকায় নতুন নতুন বাড়িঘর ভূমিধসের কবলে পড়ছে। টানা চার দিনের ভারী বর্ষণে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবিরের দুই শতাধিক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বৃষ্টির প্রভাবে উখিয়ার শফিউল্লাহকাটা আশ্রয়শিবিরের ১০-১২টি স্থানে ভূমিধস হয়েছে। একটি ঘটনায় আহত হয়েছে দুই পরিবারের চারজন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (দুর্যোগ) সত্যব্রত সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা মারাত্মক ঝুঁকিতে ছিল, তাদের বেশির ভাগকে আমরা সরিয়ে নিয়েছি। বাকিদেরও পর্যায়ক্রমে সরানো হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোরও দায়িত্ব আছে।’

ভূমিধসের ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২৯ হাজার ৬৫০ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের হিসাবে কক্সবাজারে ৩১ হাজার রোহিঙ্গা মারাত্মক ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে। এদের মধ্যে নয় হাজার মানুষ ইতিমধ্যে নানা মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে ৫৯টি ভূমিধসসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এ ব্যাপারে আইওএমের ইমার্জেন্সি কো-অর্ডিনেটর ম্যানুয়েল প্যারেইরা বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে একযোগে কাজ করছে।

উখিয়ার শফিউল্লাহকাটা আশ্রয়শিবিরে গতকাল বেলা ১১টায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এতে ওই শিবিরের ডি-২ ব্লকের বাসিন্দা মরিয়ম খাতুন (৪৫), ছমুদা খাতুন (৪২), রোকেয়া বেগম (২৫) ও তাঁর মেয়ে উম্মে হাবিবা (৩) আহত হয়। তাদের শিবিরের একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

ডি-২ ব্লকের মাঝি (নেতা) জয়নাল আবেদীন বলেন, পাহাড়ের ঢালুতে ছিল দুই পরিবারের ত্রিপলের ঘর। বেলা ১১টার দিকে প্রায় ৫০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে ধসের ঘটনায় চারজন আহত হয়।

গতকাল উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ও টেকনাফের জাদিমুরা শালবন আশ্রয়শিবিরের ভূমিধস ও বৃষ্টিতে অন্তত ১৯৮টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফের শালবন শিবিরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০টি ঘর। এ নিয়ে গত চার দিনে রোহিঙ্গাদের প্রায় দেড় হাজার ঘর বিধ্বস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ভারী বর্ষণের কারণে শিবিরের অবস্থা লন্ডভন্ড। ছোট-বড় ভূমিধসে বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাস্তার ওপর কাদা জমে সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে আশ্রয়শিবিরের ভেতরে ঢোকা যাচ্ছে না।