রাজধানীতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তরুণী ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার নিরাপত্তারক্ষী

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ২৫ বছর বয়সী তরুণী এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি। তাঁর মায়ের অভিযোগ, ৫০ বছর বয়সী নিরাপত্তারক্ষী তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। এখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই তরুণী। 

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানা-পুলিশ নিরাপত্তারক্ষী বৃহস্পতিবার মোহাম্মদ আলী এবং এতে জড়িত থাকার অভিযোগে নুর জাহান নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে। বৃহস্পতিবারই তাঁদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে তোলার পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তরুণীর মা বলছেন, অনেক আগে তাঁর স্বামী মারা গেছেন। পরে মেয়েকে নিয়ে তিনি উত্তরাতে থাকতেন। রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন। বছর তিনেক আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন, ভারী কাজ না করতে। তখন থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে উত্তরায় ভিক্ষা করতেন। মাস ছয়েক আগে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে চলে যান।

উত্তরায় থাকার সময় ৫২ বছর বয়সী নুর জাহানের সঙ্গে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তরুণী ও তাঁর মায়ের পরিচয় হয়। তরুণীর মা প্রথম আলোকে বললেন, নুর জাহানও ভিক্ষা করতেন। অসুস্থ থাকার কারণে গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে নুর জাহান তাঁকে বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মেয়েকে তাঁর কাছে রেখে যেতে। তাঁর মেয়েকে নিয়ে ভিক্ষা করে যে টাকা পাওয়া যাবে তা নুরজাহান তাঁকে দেবেন। বিশ্বাস করেই তিনি নুরজাহানের কাছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মেয়েকে রেখে যান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা-পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিকাশ কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, নুরজাহান উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তাঁর সঙ্গে থাকত ওই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তরুণী। আসামি মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে নুর জাহানের সম্পর্ক ভালো ছিল। এ সুযোগে নুরজাহানের ঘরে তাঁর যাতায়াত ছিল। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আলী ওই তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

তরুণীর মা বলেন, এক মাস আগে নুরজাহান তাঁকে বলেন, তাঁর মেয়েকে নিয়ে আর ভিক্ষা করবেন না। মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেন। চলতি মাসের প্রথম দিকে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসেন মেয়ের কাছে। তখন জানতে পারেন, মেয়ে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা।

মামলায় বাদী বলেছেন, ১১ জুন টঙ্গীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তাঁর মেয়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তখন আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন, স্থানীয় নিরাপত্তারক্ষী আলী তাঁর মেয়েকে প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। বুধবার মেয়েকে নিয়ে থানায় যান। বৃহস্পতিবার মামলা করেন।

নিরাপত্তারক্ষী আলী ও নুর জাহানকে হাজির করে তাঁদের জামিন না দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করে উত্তরা পশ্চিম থানা-পুলিশ। আদালতকে পুলিশ বলেছে, নুর জাহান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণ করতে নিরাপত্তারক্ষী আলীকে সহায়তা করেছে।

নিরাপত্তারক্ষী আলীর ফাঁসি চেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তরুণীর মা বলেন, আলীর বড় বড় দুই ছেলে আর এক মেয়ে আছে। তাঁর ছেলেরা বিবাহিত। অথচ আলীই তাঁর মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছে।

তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই বিকাশ কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তরুণী কানে শোনে কম। সরলতার সুযোগ নিয়ে আলী ধর্ষণ করেছে। যত দ্রুত সম্ভব আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেবেন।