মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, মনু ও ধলাই নদে পানি কমছে

বন্যার পানিতে মৌলভীবাজার শহরের কুসুমবাগ এলাকার রাস্তা ডুবে গেছে। মৌলভীবাজার, ১৭ জুন। ছবি: প্রথম আলো
বন্যার পানিতে মৌলভীবাজার শহরের কুসুমবাগ এলাকার রাস্তা ডুবে গেছে। মৌলভীবাজার, ১৭ জুন। ছবি: প্রথম আলো

গত ২৪ ঘণ্টায় উজানে ভারতীয় অঞ্চলে তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মৌলভীবাজারে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদে ও কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুরে মনু নদে পানি কমতে শুরু করেছে। আজ রোববার বিভিন্ন সড়ক ও বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। 

কমলগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের পতনউষার ইউনিয়নে ও শরীফপুরে আটকা পড়া পানিবন্দী মানুষজনকে উদ্ধারে সেনাবাহিনীর বিশেষ তৎপরতা শুরু হয় গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে। শরীফপুর-শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়ক দেবে ভেঙে পড়া কালভার্টটি আরও কিছুটা দেবে যাওয়ায় শরীফপুরের লোকজনের চলাচলের জন্য সড়ক জনপথ বিভাগ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।

আজ সকালে কমলগঞ্জের শমশেরনগর-কমলগঞ্জ সড়ক থেকে বন্যার পানি নেমে যায়। একইভাবে শমশেরনগর-মৌলভীবাজার সড়ক থেকেও পানি নেমে যায়। পানি নেমে যাওয়ায় সকাল থেকে এ দুটি সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে। তবে শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়কের শমশেরনগর বিমানবন্দর এলাকায় সড়কের ওপর এখনো তিন ফুট পরিমাণ পানি থাকায় এ পথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে কমলগঞ্জের নিম্নাঞ্চল শমশেরনগরের সতিঝিরগাঁও, মরাজানের পার, রাধানগর, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের রুপশপুর, বনবিষ্ণুপুর ও পতনউষার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বসতবাড়ি থেকে পানি নেমে যেতে শুরু করে। গ্রামের রাস্তাগুলোতে কিছু পানি থাকলেও বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যাওয়ায় পানিবন্দী মানুষ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে।

গতকাল সন্ধ্যা থেকে সেনাবাহিনীর দুটি দল স্পিডবোট নিয়ে কুলাউড়ার শরীফপুরে ও হাজীপুর ইউনিয়নে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। আজ সকালে সেনাবাহিনীর একটি দল স্পিডবোট নিয়ে কমলগঞ্জের পতনউষারে হাওর এলাকাসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করতে শুরু করে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, বন্যায় যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হওয়ায় সঠিকভাবে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো যাচ্ছিল না। তবে গতকাল বিকেল থেকে দুর্গত মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ত্রাণের কোনো সংকট নেই। প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে পানিবন্দী লোকজন ও আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত কমলগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। উজানে ভারতীয় অংশে তেমন বৃষ্টি না হলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও উন্নতি হবে।

কমলগঞ্জের শমশেরনগর থেকে কুলাউড়া চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কের ভেঙে পড়া কালভার্ট। কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ১৭ জুন। ছবি: প্রথম আলো
কমলগঞ্জের শমশেরনগর থেকে কুলাউড়া চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কের ভেঙে পড়া কালভার্ট। কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ১৭ জুন। ছবি: প্রথম আলো

কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের মনু সেতু-সংলগ্ন এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে কাছাকাছি একটি বড় কালভার্ট দেবে যায়। এ কারণে ১৩ জুন থেকে এ ইউনিয়নের লোকজনের যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। গতকাল বিকেলে কালভার্টটি আরও একটু দেবে গেলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। আজ সকালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা ও সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহাব উদ্দীন ভেঙে পড়া কালভার্ট পরিদর্শন করেন। সেখানে একটি বেইলি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, বেইলি সেতুটি নির্মাণে সময় লাগবে দু-এক দিন। এর আগে দেবে যাওয়া কালভার্টে বালির বস্তা ফেলে সড়কের সমান্তরাল করে গাড়ি, পিকআপ, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আপাতত মানুষজন হাটবাজারে যাতায়াত করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, শিগগিরই কালভার্টের ওপর একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করার পাশাপাশি আমতলা বাজার থেকে চাতলাপুর চেকপোস্ট পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার করা হবে। তা হলে বাংলাদেশ ও ভারতে যাতায়াতকারী ভিসাধারী যাত্রীরা আটকা পড়বেন না।