হাসান বাড়িতেই বৈঠক করবেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বসবেন জাহাঙ্গীর

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচার কাল সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। ২৬ জুন দেশের সবচেয়ে বড় এ সিটির নির্বাচন।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুসারে গত ১৫ মে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তির প্রজ্ঞাপন ও নির্বাচনের তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের তফসিলের কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশন পৃথক তিনটি আবেদন করে। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ এই নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করে ২৮ জুনের মধ্যে এ নির্বাচন করতে বলেন।

গত ১৩ মে ইসির সভায় ২৬ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সামনে রমজান মাস থাকায় এরপরই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। ইসি তখন এ নির্দেশ দেয় যে প্রার্থীরা প্রচারের সুযোগ পাবেন ১৮ জুন থেকে। এর আগে কোনো প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না।

নতুন ঘোষিত নির্বাচনের তারিখের ফলে গাজীপুরবাসী ঈদের পরেই ভোট দেওয়ার সুযোগ পান। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরাও তাই চেয়েছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, ঈদের পর ২৫ থেকে ২৭ জুনের আগে যেন এই নির্বাচন না হয়। কারণ, এই সিটির ভোটারদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পোশাকশ্রমিক। ঈদের পরপর ভোট হলে তাঁরা ভোট দিতে পারবেন না।

৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। ভোটার ১১ লাখের বেশি।

এই নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। গত এক মাসে দুই প্রার্থী সরাসরি কোনো প্রচারে না থাকলেও বিভিন্ন ইফতার এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত যোগ দিয়েছেন। দুই প্রার্থীই গতকাল শনিবার মাসব্যাপী তাঁদের কর্মব্যস্ততার কথা বলেছেন।

হাসান সরকার জানান, পুরো রমজান মাস গেছে ব্যস্ততায়। ধর্মীয় নেতা, দলীয় নেতা-কর্মীসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষদের সঙ্গে তিনি বসেছেন।

জাহাঙ্গীর আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো দিন চার-পাঁচ শ মানুষ ছাড়া ইফতার বা সাহ্‌রি করিনি। এগুলো ছিল সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ। কোথাও তো ভোট চাইনি।’

নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ায় প্রধান দুই প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলেন জানান। গতকাল ঈদের দিন সকালে দুই প্রার্থী টঙ্গীতে এক আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধার জানাজায় শরিক হন। সেখানে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন।

কাল সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারে দুজনেরই কর্মসূচি রয়েছে।

বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার আজ রোববার বললেন, কাল সকালে তিনি বাড়ি থাকবেন। সেখানে দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন। হাসান সরকার জানান, দলের নেতা এবং কোনাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকারকে গত পরশু গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সে বিষয় নিয়েই ওই অঞ্চল এবং জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এখন কোনাবাড়ী বা ওই অঞ্চলে কাকে দায়িত্ব দেওয়া যায়, সে বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।

হাসান সরকার কাল দুপুরের পর পূবাইলের দিকে নির্বাচনী প্রচারে যাবেন। সেখানে তিনি গাড়িতে থেকে গণসংযোগ করবেন। এ পর্যন্ত সাত থেকে আটটি ওয়ার্ডে তিনি এখনো যেতে পারেননি বলে জানান। বিশেষ করে বাসন ইউনিয়নে যাওয়া হয়নি। এদিকটা এখন সেরে নেবেন। তিন বললেন, ‘এ যাবৎ নির্বাচনী প্রচারে কোনো বাধা পাইনি। যেটা সত্যি সেটাই বলব।’

আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম কাল সকালে টঙ্গীর বোর্ড বাজারে এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি বললেন, দেশের বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধাদের দোয়া নিয়ে কাল নির্বাচনী প্রচার শুরু করব।’

জাহাঙ্গীর কাল ১০টি ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচার চালাবেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় পথসভা করবেন বলে জানান।