তিন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

মনু নদের বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে মৌলভীবাজার শহরের কিছু এলাকায়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে জাল ফেলে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। গতকাল সকালে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
মনু নদের বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে মৌলভীবাজার শহরের কিছু এলাকায়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে জাল ফেলে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। গতকাল সকালে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

উজান থেকে আসা ঢল এবং কয়েক দিনের টানা বর্ষণে সিলেট, মৌলভীবাজার, ফেনীতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো পানিবন্দী হয়ে আছে এই তিন জেলার লাখো মানুষ। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

মৌলভীবাজার শহরের কুসুমবাগে দুটি এবং উপজেলা পরিষদ এলাকায় দুটি খাদ্যগুদামে গত শনিবার ঢুকে যাওয়া পানি গতকাল সোমবারও ছিল। এই চারটি গুদামে ১ হাজার ৫৬৮ মেট্রিক টন চাল ও ৪২৪ মেট্রিক টন গম রয়েছে। মৌলভীবাজারে বন্যার পানির স্রোতে নিখোঁজ সাতজনের মধ্যে শনিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মৌলভীবাজার পৌরসভার বারইকোনা গ্রামের কাছে মনু নদের বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এতে পৌরসভার পশ্চিম ও দক্ষিণের তিনটি ওয়ার্ডসহ সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মৌলভীবাজার শহরের কুসুমবাগ থেকে হিলালপুর পর্যন্ত। দুই দিন ধরে পানি কমলেও গতকাল দুপুরে শহরের চাঁদনীঘাটে বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল মনু নদের পানি। তবে ধলাই নদের পানি বিপৎসীমার নিচে চলে এসেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, জেলার রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলায় মনু নদের বাঁধে ১২টি জায়গায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এসব এলাকায় পানি কিছুটা কমলেও সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ও কনকপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনুতে পানি কমছে। ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে নিচের দিকে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।’

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রোববার সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল এবং মনু ও ধলাই নদের বাঁধ ভেঙে বন্যায় মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার ৩০টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দুই লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

কমলগঞ্জে ধলাই নদের নয়টি জায়গায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে নয়টি ইউনিয়নের ১৪৫টি গ্রামের সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল। পানির স্রোতে নিখোঁজ হয়েছিলেন বাবা-ছেলেসহ সাতজন। তাঁদের মধ্যে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার দুপুর থেকে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী একটি দল পতনঊষার ইউনিয়ন থেকে স্পিডবোটে করে উদ্ধারকাজ শুরু করে।

সিলেটেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জ, ওসমানীনগর, গোয়াইনঘাট উপজেলা। বন্যার্ত লোকজনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এই দুই উপজেলায় মুহুরী নদীর ১৩টি জায়গায়, সিলোনিয়ার ৩টি এবং কহুয়ার জায়ড়ায় বেড়িবাঁধে ভাঙন ধরায় ১২ জুন ৩৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে বন্যার পানি নেমে গেছে।

কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। শিবগঞ্জ-বেগমপুর সড়কে পানি ওঠায় পাইলগাঁও ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার, সিলেট অফিস এবং প্রতিনিধি, জুড়ী, কমলগঞ্জ, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) ও ফেনী]