মালিবাগ-নতুনবাজারের যানজট কমাতে ইউলুপ চালু হবে কবে?

বাড্ডা ইউলুপের কাজ চলছে তিন বছর ধরে, তবু শেষ হচ্ছে না। নির্মাণাধীন ইউলুপের তলায় জমে আছে বৃষ্টির পানি। ছবি গতকালের।  প্রথম আলো
বাড্ডা ইউলুপের কাজ চলছে তিন বছর ধরে, তবু শেষ হচ্ছে না। নির্মাণাধীন ইউলুপের তলায় জমে আছে বৃষ্টির পানি। ছবি গতকালের। প্রথম আলো
>
  • মালিবাগ-নতুনবাজার সড়কে যানজট কমাতে দুটি ইউলুপ যুক্ত করা হয়েছিল।
  • একটি চালু হলেও বাড্ডা ইউলুপের নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে না।

বাড্ডা নতুনবাজার থেকে নিয়মিত রামপুরা যেতে হয় একটি সরকারি হাসপাতালের নার্স সুচিত্রা বিশ্বাসকে। কখনো বাসে, কখনোবা টেম্পোতে চড়ে। বাড্ডা ইউলুপ নির্মাণস্থলের ‘বিধ্বস্ত’ সড়ক ধরে যাতায়াতের সময় প্রতিদিনই তিনি আতঙ্কে থাকেন, এই বুঝি উল্টে যাবে গাড়িটি!

সুচিত্রা বিশ্বাসের প্রশ্ন, কবে এই ইউলুপের কাজ শেষ হবে? অবসান হবে প্রতিদিনের দুর্ভোগের।

এমন প্রশ্ন শুধু সুচিত্রা বিশ্বাসের নয়, স্থানীয় বাসিন্দা তো বটেই, ওই পথে চলাচলকারী নতুনবাজার, ভাটারা, বেরাইদ, সাঁতারকুল, কুড়িলসহ অন্যান্য এলাকার যাত্রীদেরও। বিপরীত দিক থেকে আসা রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগের যাত্রীরাও বিরক্ত। এই ইউলুপ নির্মাণস্থলে রাস্তাঘাট শুধু বেহালই নয়, রাস্তার মাঝে যেখানে-সেখানে পড়ে থাকা আবর্জনা, পরিত্যক্ত নির্মাণসামগ্রী দিন দিন মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, জমির মালিকানা নিয়ে মামলাসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে সময় লেগেছে। তবে এখন আর জটিলতা নেই। দুই মাসের মধ্যে এটি চালু হয়ে যাবে।

মালিবাগ-নতুনবাজারের মধ্যকার যানজট কমাতে হাতিরঝিল প্রকল্পের সঙ্গে দুটি ইউলুপ যুক্ত করা হয়। একটি ইউলুপ রামপুরা টেলিভিশন ভবনের সামনে, যা গত বছরের ২৫ জুন চালু হয়েছে। দ্বিতীয়টি বাড্ডা ইউলুপ। গুলশান-বাড্ডা সংযোগ সড়কের কাছে মেরুল বাড্ডায় এর অবস্থান। সাড়ে ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থের এই ইউলুপ তৈরিতে বাজেট ছিল ৪০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি শুরু হওয়া কাজ দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেরির কারণে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ কোটি টাকা।

গতকাল সোমবার বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইউলুপের দুই প্রান্তের প্রবেশপথ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে রাখা। মূল প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এলেও এখনো দুই পাশের র্যাম্পের ইস্পাতের শাটারগুলো অরক্ষিত অবস্থাতেই রয়েছে। সেগুলোতে মরচে ধরেছে। ইউলুপের নিচে এবং দুই পাশের রাস্তার কিছু অংশে মাটির স্তূপ। ছড়িয়ে আছে অনেকগুলো ব্লক। এক প্রান্তে জমে থাকা পানিতে শেওলা। দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে মশার লার্ভাও দেখা যায়। দুই পাশের রাস্তার ভগ্নদশা।

এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ যানবাহনের যাত্রীদের। কারণ, লুপের নিচে রাস্তা এতই এবড়োখেবড়ো যে ঝাঁকির কারণে উত্তর বাড্ডার দিক থেকে আসা যানবাহনগুলোতে বসে থাকাই দায়।

স্থানীয় দোকানি রহমত উল্লাহ বলেন, ইউলুপ নির্মাণ করা হচ্ছে যানজট কমাতে। তিন বছর ধরে দুই পাশের রাস্তা এমন খারাপ করে রাখা হয়েছে যে আগের চেয়ে যানজট আরও প্রকট হয়েছে। ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

তুরাগ পরিবহনের বাসচালক ইলিয়াস উদ্দিনের কথা হচ্ছে, ‘এখানে চলতে গেলে গাড়ি এমন লাফায় যে যাত্রীরা আপত্তি করে, নিজেরও খারাপ লাগে।’

হাতিরঝিল প্রকল্পের রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অংশের পরিচালক জামাল আখতার প্রথম আলোকে বলেন, জায়গা নিয়ে মামলার কারণে ইউলুপ নির্মাণে দেরি হয়েছে। তা ছাড়া মাটির নিচে বিভিন্ন সেবা কোম্পানির কেবল সরাতে লেগে গেছে অনেক সময়। তবে জটিলতা কেটেছে, প্রায় ৯৭ ভাগ কাজ শেষও হয়েছে। আগামী আগস্ট নাগাদ এই ইউলুপ চালু হতে পারে। তার আগে দুপাশের রাস্তা মেরামত করে কার্পেটিং করা হবে।