উদনাছড়ার পানিতে সড়কে ধস, দুর্ভোগে ১০ গ্রামের মানুষ

ঈদের আগের দিন উদনাছড়ার প্রবল স্রোতে শ্রীমঙ্গলের উদনার পাড়ে একটি রাস্তার ১২ ফুট জায়গা ধসে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের উদনার পাড় এলাকায় বৃহস্পতিবার তোলা। ছবি: শিমুল তরফদার
ঈদের আগের দিন উদনাছড়ার প্রবল স্রোতে শ্রীমঙ্গলের উদনার পাড়ে একটি রাস্তার ১২ ফুট জায়গা ধসে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের উদনার পাড় এলাকায় বৃহস্পতিবার তোলা। ছবি: শিমুল তরফদার

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আশিদ্রোন ইউনিয়নের উদনাছড়ার পানির স্রোতে পাড় ভেঙে একটি সড়ক ও একটি সেতু ধসে গেছে। এতে শহরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যান চলাচল। ফলে স্থানীয় উড়নারপাড় গ্রাম ও আশপাশের মতিগঞ্জ, নওয়াগাঁও, কাজিরগাঁও, রসুলপুর, ডোবাগাঁও, জিলাদপুরসহ ১০ গ্রামের বাসিন্দা মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল থেকে মতিগঞ্জ হয়ে ভুজপুর যাওয়ার পথে আশিদ্রোন ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার উদনারপাড় গ্রামের প্রধান সড়কটির মধ্যভাগ বরাবর প্রায় ১২ ফুট জায়গাজুড়ে ভেঙে গেছে। এ রাস্তায় ভোগান্তি নিয়ে গ্রামবাসী শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এলাকার লোকজন নিজ উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে গ্রামবাসীর চলাচলের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য উদনারপাড়ের ভাঙার পাশ ঘেঁষে মাটির বস্তা ফেলে পায়ে চলার রাস্তা তৈরি করে দিয়েছেন। তবে এই রাস্তা দিয়ে সাইকেল-মোটরসাইকেল ছাড়া কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।
একই ইউনিয়নের ভুজপুর এলাকার জোড়াপুলসংলগ্ন ব্রিজ ধসে গিয়ে যান চলাচল ব্যাহত রয়েছে। সেতুটি পুরোপুরি ধসে যাওয়ায় শুধু ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে যাওয়াই সম্ভব হচ্ছে। কোনো ধরনের যান চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না।

উদনার পাড় এলাকার বাসিন্দা মনির মিয়া জানান, উদনার পাড় এলাকার যে জায়গায় ভাঙন ছিল, সে স্থানে আগে একটি পাকা সেতু ছিল। বেশ কয়েক বছর আগে উদনার পানি উঠে গিয়ে ব্রিজটি ধসে পড়লে এই জায়গায় মাটি ভরাট করে সরাসরি রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এ বছর ঈদুল ফিতরের আগের দিন গত শুক্রবার উদনা ছড়ার পানি বেড়ে গিয়ে গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হতে থাকে। ফলে রাস্তাটির প্রায় ১২ ফুট অংশ ভেঙে যায়।

স্থানীয় আছিদ উল্লাহ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পান্না লাল বর্ধন প্রথম আলোকে বলেন, দুটি রাস্তাই প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটারের ব্যবধান হবে। এই রাস্তাগুলোতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোকজনের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এ রাস্তা দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে ভুজপুর এলাকার শিক্ষার্থী জুয়েল মিয়া জানায়, ব্রিজ ধসে যাওয়ার কারণে অটোরিকশা বা অন্য যানবাহন নিয়ে গেলে অনেক জায়গা ঘুরে শহরে যেতে হয়। এ কারণে আগে যেখানে ২০ টাকা দিয়ে তারা যেতে পারত, সেখানে তাদের ৫০-৬০ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

এই সড়কের অটোরিকশাচালক নুরুল হক বলেন, ‘এই রাস্তায় চলতে পারছি না। অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে আমাদের অনেক বেশি সময় লাগছে। অনেক যাত্রীই বেশি ভাড়া দিতে চায় না। আমরা অনেক জায়গা ঘুরে গেলে আমাদের গ্যাস ও সময় বেশি খরচ হচ্ছে।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকৌশলী সঞ্জয় মোহন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সেতু ও রাস্তা নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। যেহেতু এই রাস্তাগুলো দিয়ে গ্রামের লোকজনকে চলাচল করতে হয়, তাই আপাতত চলাচলের জন্য উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আশিদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদকে সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে আশিদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রণেন্দ্রপ্রসাদ বর্ধন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে আমরা দুটি জায়গায় (ভাঙা রাস্তা ও ব্রিজ) সাময়িকভাবে চলাচল উপযোগী করে তুলতে জন্য আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কাজ শুরু হবে। আশা করছি দ্রত কাজ শেষ হবে।’