৬৯ বছরে এসে আ.লীগ পেল ১০ তলা কেন্দ্রীয় কার্যালয়
৬৯ বছর আগে পুরান ঢাকার কে এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন গঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন জায়গায় দল পরিচালিত হলেও আওয়ামী লীগের নিজস্ব কোনো কার্যালয় ছিল না। প্রতিষ্ঠার ৬৯তম বছরে আজ শনিবার গুলিস্তানের ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের ১০ তলা কেন্দ্রীয় প্রধান কার্যালয় ভবনের উদ্বোধন করেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে আজ শনিবার সকালে দলের নবনির্মিত কেন্দ্রীয় ১০ তলা ভবনের ফলক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী পায়রা ও বেলুন ওড়ান এবং ভবনের সামনে একটি চারা গাছ রোপণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন।
এর আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিবর্তন করা হয়েছে বেশ কয়েকবার। ১৯৫৩ সালে কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী একটি কার্যালয় ছিল আওয়ামী লীগের। পরে ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগের কার্যালয় যায় পুরান ঢাকার ৫৬ সিমসন রোডের ঠিকানায়। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯১ নবাবপুর রোডে দলীয় কার্যালয় নেন। এরপর আরও অন্তত তিনবার দলীয় কার্যালয়ের স্থান পরিবর্তন হয়। সবশেষ ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হয় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। এখানেই স্থায়ী ভবনে দলীয় প্রধান কার্যালয় পেল আওয়ামী লীগ।
কী আছে নতুন ভবনে?
আট কাঠা জমির ওপর নির্মিত হয়েছে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিনন্দন কেন্দ্রীয় কার্যালয়। নিজস্ব অর্থায়নে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন ভবনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলবে। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম এবং আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সেলসহ (সিআরআই) দলের অন্যান্য সংস্থার গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।
আওয়ামী লীগের এই ভবনের সামনে স্টিলের বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। এর পাশে দলীয় প্রতীক নৌকা। তার নিচেই লেখা রয়েছে কার্যালয়ের ঠিকানা। ভবনের ওপরের দিকে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। এরপর একটি ম্যুরালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র। এর নিচের একটি ম্যুরালে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ভবনটির প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪ হাজার ১০০ বর্গফুট। চতুর্থ তলা থেকে ওপরের সব কটি ফ্লোর ৩ হাজার ১০০ বর্গফুটের। সিঁড়ির পাশাপাশি ভবনটিতে দুটি লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে।
ভবনটিতে ঢোকার সময় হাতের ডান পাশের দেয়ালের বাইরের দিকে স্টিলের পাতে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা আছে। ভবনে প্রবেশের পরই হাতের ডানে একটি অংশে ছোট ছোট গাছ লাগানো রয়েছে। গাছগুলো একটি বেষ্টনীর মধ্যে রাখা। এরপরই রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় একটি ম্যুরাল। এ ছাড়া এই ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রবেশের পর হাতের বাঁ পাশে রয়েছে অভ্যর্থনার জায়গা। এ ছাড়া ভবনটির পেছনের ফটকের বাইরে লোকজন বসার মতো একটি জায়গা রাখা হয়েছে। জায়গাটির মাঝে সুন্দর করে গাছ লাগানো। কেউ চাইলে এই জায়গায় ধূমপান করতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার মাঝখানে কনফারেন্স কক্ষ রয়েছে। এর দুই পাশে বেশ কিছু কক্ষ রয়েছে। কনফারেন্স কক্ষে অন্তত ৩৫০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। তৃতীয় তলায় ২৪০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যালয় রয়েছে। এই দুই তলায় দলের অফিস, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও মিডিয়া রুমও রয়েছে।
ষষ্ঠ তলায় রয়েছে সম্মেলনকক্ষ। দলের কোষাধ্যক্ষের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সপ্তম তলা। অষ্টম তলায় সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়। নবম তলা প্রস্তুত করা হয়েছে দলের সভানেত্রীর জন্য। তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ফ্লোরটি ‘বুলেটপ্রুফ’ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও এ বিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি। সভানেত্রীর কক্ষের সঙ্গে বিশ্রামাগার ও নামাজের জায়গা রয়েছে। ভবনের দশম তলায় রয়েছে ক্যাফেটেরিয়া।
এ ছাড়া ভবনে রয়েছে ভিআইপি লাউঞ্জ, সাংবাদিক লাউঞ্জ, ডরমিটরি ও ক্যানটিন। ইন্টারনেট সুবিধার জন্য পুরো ভবনটি ওয়াইফাইয়ের আওতায় থাকবে।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টির জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া। এই জমি ৯৯ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়ার পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ভবনটি নির্মাণের সম্ভাব্য সময়ের চার মাস আগে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ভবনের নির্মাণকাজ হয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে। ভবনটির কিছু ফ্লোরের কাজ এখনো বাকি রয়েছে। সেগুলো শিগগিরই শেষ করা হবে বলে জানা গেছে।