নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে টাকা নষ্টের দরকার কী, প্রশ্ন হাসান উদ্দিনের

গাজীপুরে নিজের বাসভবনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। ছবি: প্রথম আলো
গাজীপুরে নিজের বাসভবনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার অভিযোগ করেছেন, তাঁর নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে পুলিশ। নির্বাচনের আগে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের গাড়িতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের ঘুরে বেড়ানো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে গাজীপুর কলেজ গেটে নিজের বাসভবনে হাসান উদ্দিন প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে পুলিশ। নির্বাচন থেকে সরে যেতে হুমকি দিচ্ছে। অনেকের দরজা-জানালা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।’

কার কার বাড়িতে হামলা করা হয়েছে, তা জানতে চাইলে হাসান উদ্দিন দাবি করেন, বাসন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় হামলা হয়েছে। তাঁর বাড়ির দরজা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীরের সঙ্গে দেখা করতে বলেছে পুলিশ।

হাসান উদ্দিন অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময়ে টঙ্গীর কলেজ গেটে বিএনপির দলীয় কার্যালয় চারবার আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি বাড়িতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। ‘যে শাসনব্যবস্থা চলছে, তাতে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।


হাসান উদ্দিন বলেন, ‘আলাউদ্দিন আমার নির্বাচনী এজেন্ট। তাঁর সঙ্গে এমন খারাপ ব্যবহার মেনে নেওয়া যায় না।’

হাসান উদ্দিনের ভাষ্য, আলাউদ্দিন ছাড়াও আরেক এজেন্ট টঙ্গীর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ভেন্ডরের বাড়িতে গত দুই রাতে ডিবি পুলিশ গেছে। এ সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। আরও অনেকের বাসায় পুলিশ যাচ্ছে। তারা নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে মোবাইলে জাহাঙ্গীর আলম ভেন্ডরের খোঁজখবর নেন হাসান উদ্দিন। এ সময় তিনি জাহাঙ্গীর আলম ভেন্ডরকে বলেন, ‘ভয় পাইও না।’

হাসান উদ্দিন কয়েকটি পত্রিকা দেখিয়ে বলেন, পত্রিকায় ছবি এসেছে, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম পুলিশের গাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতেই বোঝা যায় নির্বাচনের পরিস্থিতি কী!

হাসান উদ্দিনের অভিযোগ, ‘নির্বাচনের আগে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁদের ডেকে নিয়ে যা-তা বলে অপমান করেছেন। যা যা বলেছেন, তা দুর্ভাগ্যজনক।’

হাসান উদ্দিন প্রশ্ন করেন, ‘নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না করবেন, তাহলে নির্বাচন করে জনগণের টাকা নষ্ট করার দরকার কী? তা অন্য উন্নয়নের কাজে ব্যয় করতে পারতেন।’

আলাপকালে হাসান উদ্দিনের সামনে থাকা তাঁর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সোহরাব উদ্দিন প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ প্রতিটি ইউনিয়নে তাঁদের কর্মীদের তালিকা করছে। সেই তালিকা ধরে তাঁদের হয়রানি করছে। যাঁদের বাড়িতে পাচ্ছে না, তাঁদের পরিবারের নারী সদস্যদের নানা হুমকি দিচ্ছে ভোট থেকে সরে আসার জন্য। এখানকার পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা কেউ তাঁদের কথা শুনছেন না। তাঁরা ফোন পর্যন্ত ধরছেন না।

হাসান উদ্দিনের অভিযোগ, কিছুদিন আগে খুলনা সিটিতে নির্বাচন হয়েছে। ওই নির্বাচনে যে কৌশল ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ জিতেছে, এখানেও তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

হাসান উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমাদের এজেন্টদের আটকে রাখার চক্রান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের সময় আটকে রেখে তাঁদের কোনো কিছু করতে দেওয়া হবে না। তাঁদের নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। আমি সরকারকে আমাদের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এদিকে বেলা ১১টার দিকে টঙ্গী কলেজ গেটে বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একই অভিযোগ করেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির ৫০ জন নেতা-কর্মীকে মামলা দিয়ে ব্যস্ত রাখা হয়েছে। আজ নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে ওই সব মামলায় নেতা-কর্মীদের অনেকের হাজিরার দিন ধার্য করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে, যাতে নেতা-কর্মীরা তাঁর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে না পারেন।

হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কাল শনিবার কাউকে নরসিংদী, কাউকে টাঙ্গাইল, কাউকে বা নারায়ণগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারও কারও হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না।’

হাসান উদ্দিন আরও বলেন, ‘এ অবস্থাতেও আমরা নির্বাচনে আছি, থাকব। আমরা কোনো কিছুর সামনে মাথানত করব না। সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যে আইনগুলো তৈরি করেছেন, সেগুলো বাস্তবায়ন করলেই চলবে। এটা আমার বিরুদ্ধে গেলেও অভিযোগ করব না।’

ভোট সুষ্ঠু হলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, ‘ভোট ন্যূনতম সুষ্ঠু হলে আমরা জয়লাভ করব। সম্মানজনক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হব। ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

কাল বাদে পরশু গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট। গতকালই কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল পৌঁছানো শুরু হয়েছে। প্রস্তুত আনসার, পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১১ হাজার সদস্য।