জনগণ ভোট না দিলে দায় আপনাদেরই: প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন শেষে ভবনের ভেতর ঘুরে দেখেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ফোকাস বাংলা
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন শেষে ভবনের ভেতর ঘুরে দেখেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফোকাস বাংলা
  • শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা হয়
  • দলের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই সভার আয়োজন
  • বিভেদের কথা বললেন তৃণমূলের নেতারা
  • অনুপ্রবেশ না ঠেকালে বিপদের আশঙ্কা
  • এক হয়ে কাজ করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বিভেদের কথা বললেন তৃণমূলের নেতারা, অনুপ্রবেশ না ঠেকালে বিপদের আশঙ্কা তাঁদের। এক হয়ে কাজ করার নির্দেশ।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জিং বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এ জন্য দলের সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের এক বিশেষ বর্ধিত সভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়। এতে কেন্দ্রীয় ছাড়াও সারা দেশ থেকে ছয় হাজারের বেশি নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয়।

সরকারের উন্নয়নকাজ প্রচার করার আহ্বান জানিয়ে দলের নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে উন্নয়ন করেছি তাতে মানুষ নৌকায় ভোট দেবে না, এটা হতে পারে না। যদি ভোট না দেয় সে জন্য আপনারাই দায়ী থাকবেন। কারণ, আপনারা সঠিকভাবে মানুষের কাছে যেতে পারেননি, তাদের কাছে সরকারের উন্নয়নের কথা বলতে পারেননি। তাদের বোঝাতে পারেননি।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘আমরা যে কাজ করেছি তা অন্য দল করেনি। তাহলে কেন তারা ভোট পাবে?’

সভায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। এই কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবে, নির্বাচন মানেই এটা চ্যালেঞ্জিং হবে। এটা কিন্তু আমাদের একটানা তৃতীয়বার। এই তৃতীয়বারের নির্বাচনে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।’

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্যাগের মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে, যেন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার জয়লাভ করে সরকার গঠন করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে। ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি করে কেউ জিততে পারবে না। আওয়ামী লীগ এ বদনাম নেবে না।’

দলের অভ্যন্তরীণ বিভেদ পরিহারের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাকে আমরা নৌকা মার্কা দেব, যাকে আমরা নির্বাচনে প্রার্থী করব, তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে।’ আগামী নির্বাচনে জোট-মহাজোট গঠনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জোট করেছি, মহাজোট করেছি। দলের স্বার্থে এটা করতে হয়েছে। আগামীতেও আমরা এটা করব। আমরা বন্ধু হারাব না। সবাইকে নিয়েই থাকতে চাই।’

সভার শুরুতে দলের দপ্তর সম্পাদক শোক প্রস্তাব পাঠ করার পর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পর আট বিভাগ থেকে আটজন নেতাকে বক্তৃতা করার সুযোগ দেওয়া হয়।

দলের লোকের সমালোচনা নয়

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত প্রার্থী হয়ে বিএনপির সন্ত্রাস, লুটপাট, দুর্নীতি বা জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা সম্পর্কে কিছু বলে না। তাদের বক্তব্য আওয়ামী লীগ এমপির বিরুদ্ধে, সংগঠনের বিরুদ্ধে। তিনি তাঁদের সাবধান করে বলেন, ‘কেউ যদি আমার দলের উন্নয়নের কথা না বলে কোথায়, কার কী দোষ আছে সেগুলো খুঁজে বের করে জনগণের কাছে গিয়ে বলেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের নমিনেশন পাবেন না।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যদি কেউ ৫ বছর, ১০ বছর সরকারে থাকার পর দলের বিরুদ্ধে বদনাম করে তাহলে জনগণ তো তাঁকেও ভোট দেবে না। আজকাল সব কথাই রেকর্ড হয় এবং চাইলে মোবাইলে সেগুলো তিনি শুনতেও পারেন। তাঁর মোবাইল ফোনে দিনে তিন-চার শ খুদে বার্তা আসে এবং সময় পেলেই তিনি প্রতিটি বার্তা পড়েন এবং সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন।

দলের বদনাম করা সহ্য করা হবে না জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সময় কিন্তু আর বেশি নেই। কেউ দলীয় মনোনয়ন পাবেন কি পাবেন না সেটা নির্ভর করে এলাকায় কতটুকু জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছেন আর দলের নেতা-কর্মীদের কীভাবে মূল্যায়ন করছেন তার ওপর।’

সাংসদের দুর্নীতির বিষয়ে সতর্কতা

প্রধানমন্ত্রী দলীয় সাংসদদের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়নের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের যাঁরা সাংসদ আছেন তাঁদেরও আমি বলব, একটা কথা মনে রাখবেন। জনগণ কিন্তু খুব হিসেবি। কেউ দুর্নীতি করলে জনগণ কিন্তু সেটা ঠিকই মাথায় রাখবে। সেটা কিন্তু তারা ভুলে যায় না। কাজ করতে গিয়ে টাকা নিলে পরে ভোট চাইতে গেলে তারা বলবে টাকা দিয়ে কাজ নিয়েছি ভোট দেব কেন?’

অতীতে দলের নানা ঝড়-ঝাপটার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুঃসময়ে যারা মাঠে থাকে, দলের ভার বয়ে রাখে, সেই কর্মীরা যেন অবহেলিত না হয়।

সুবিধাবাদীদের দলে ভেড়াবেন না

দল ক্ষমতায় থাকলে সুবিধাভোগী শ্রেণি অন্য দল থেকে দলে এসে ভিড়লেও অসময়ে তাদের পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা ক্ষমতায়, বিভিন্ন দল থেকে অনেকেই ছুটে আসবে। গ্রুপিং করার জন্য বাছবিচার ছাড়াই অনেকে যাকে পাচ্ছে তাকে নিয়ে নিজের শক্তি দেখাতে চায়। এরা আসে মধু খেতে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা ভাবে এখানে (আওয়ামী লীগ) এলে মামলা থেকে বাঁচতে পারবে। ক্ষমতার সঙ্গে থাকলে পয়সা বানাতে পারবে।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে এবং বাঁচার জন্য দলে এসেছে তাদের তালিকা আছে। কেউ তাদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকলে বিদায় করার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপি গঠনতান্ত্রিক দুর্নীতিবাজ

বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিবাজদের দলে রাখার জন্য দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে বিএনপি নিজেদের দুর্নীতিবাজ দল হিসেবে প্রমাণ করেছে। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে আজ তাদের নেত্রী জেলে। আবার জেলে যাওয়ায় তার অবর্তমানে এমন একজনকে চেয়ারপারসন হিসেবে নিয়োগ করা হলো, যে দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, যারা জুয়া খেলে অর্থ উপার্জন করে, মাদকসেবী, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত—তারা কেন ভোট পাবে?

কোন্দল ও অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গ

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘নতুন করে অনেকে নৌকায় ওঠার কারণে আমাদের কাপড় ভিজে গেছে। জিয়া আর মোশতাকের প্রেতাত্মারা নৌকার ওপর ভর করেছে। এটা অব্যাহত থাকলে নৌকার সলিলসমাধি হবে।’

দলের কোন্দলের কথা তুলে ধরে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ বলেন, ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের সমস্যা আছে বলে মনে হয় না। সমস্যা হচ্ছে কোন্দল। দলের নেতারা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলেন না। চেহারাও দেখতে চান না। আওয়ামী লীগকে হারানোর জন্য আওয়ামী লীগই যথেষ্ট।

খুলনা জেলার সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি নেছার আহমেদ, রাজশাহী মহানগর সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বরিশাল বিভাগ থেকে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, চট্টগ্রামের সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, রংপুর বিভাগের আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ এ সময় বক্তৃতা করেন।

নেতাদের বক্তব্য শোনার পর শেখ হাসিনা জানান, সংসদের বাজেট অধিবেশনের পর ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের গণভবনে ডাকা হবে।

গতকাল তৃণমূল নেতাদের দুটি করে সিডি দেওয়া হয়। এতে বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের চিত্র রয়েছে। এটা প্রচারের নির্দেশ দেন দলীয় প্রধান।