বিজ্ঞান মেলায় দেখা মিলছে নানা উদ্ভাবন

একটি স্টলে আগত দর্শনার্থীদের কাছে খুদে দুই শিক্ষার্থী নিজেদের উদ্ভাবন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরছে। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, আগারগাঁও, ঢাকা, ২৪ জুন। ছবি: প্রথম আলো
একটি স্টলে আগত দর্শনার্থীদের কাছে খুদে দুই শিক্ষার্থী নিজেদের উদ্ভাবন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরছে। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, আগারগাঁও, ঢাকা, ২৪ জুন। ছবি: প্রথম আলো

সূর্যের আলো সেন্সর বোর্ডে পড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতির আলো নিভে যাবে। আবার সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে উঠবে বাতি। এতে দিনের বেলায় বিদ্যুৎ অপচয় কমবে। সাশ্রয়ের এমন উদ্ভাবন প্রদর্শন করছেন কক্সবাজারের কাউখালী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রুবাইদা ও কিরণা চাকমা। এই দুই বান্ধবীর ঢাকায় এবারই প্রথম আসা।

ঢাকার আগারগাঁও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে আজ রোববার সকাল থেকে শুরু হয়েছে ৩৯তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা। সেখানেই কথা হয় রুবাইদার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে অনিচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। সড়কবাতি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বাতি এমনকি ঘরের বাতি দিয়েও অনেক বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে প্রতিদিন। এটা বন্ধ করার ভাবনা থেকেই এই উদ্ভাবন।’

রুবাইদার বান্ধবী কিরণ চাকমা বলেন, ‘ঢাকায় এবারই প্রথম এসেছি। এই মেলায় এসে খুব ভালো লাগছে। নিজেদের প্রকল্প ছাড়াও অন্যদের প্রকল্পগুলো থেকে অনেক কিছু শিখছি। বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়ছে।’

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী এই মেলার এবারের স্লোগান ‘মেধাই সম্পদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই ভবিষ্যৎ’। জেলা পর্যায়ের জুনিয়র, সিনিয়র ও বিশেষ গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকারী প্রতিযোগী শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ক্লাবের সদস্য মিলিয়ে প্রায় ৭০০ জন মেলায় অংশ নিচ্ছেন। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত মেলা দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।

দুপুর ১২টায় মেলার উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। উদ্বোধনের আগে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আর আগের জায়গায় নেই। প্রতিদিনই একটু একটু করে এগোচ্ছে। আর এই এগিয়ে যাওয়ার চালিকাশক্তি হচ্ছে দেশের নতুন প্রজন্ম।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিজ্ঞান শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিতে আর শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্ভাবনের উৎসাহ দিতেই এ আয়োজন। শুধু পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে থাকলে চলবে না। অনানুষ্ঠানিক বিজ্ঞান চর্চা করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায় বলেন, প্রত্যেকবার নতুন নতুন শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবন দেখা যায়। এবারও আয়োজনটা বড় আকারের। জাতীয় পর্যায়ের এই মেলায় আরও আছে দ্বিতীয় জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এবং দ্বিতীয় জাতীয় বিজ্ঞানবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা।

পরিকল্পিত নগর, কৃষি ও বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান, রোবটসহ বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করেছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। মেলায় ১৯২টি প্রকল্প প্রদর্শিত হচ্ছে।

১১ বছর বয়সী তৃষ্ণা হালদার মেলায় এসেছে তাঁর সহজে ঘনত্ব পরীক্ষার পদ্ধতি ‘ডেনসিটি টাওয়ার’ প্রকল্প নিয়ে। সে জানাল, মধু, তেল, রঙিন পানি ও কেরোসিন দিয়ে কী করে ঘরে বসেই তরল পদার্থের ঘনত্ব কোনটার বেশি বা কোনটার কম বোঝা যাবে।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা এসএস মডেল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র সাইয়েদুল মোস্তায়িন বানিয়েছে সোশ্যাল হিউম্যানয়েড রোবট। তাঁর রোবটের নাম ‘তারু’। তাঁর স্টলের সামনে দেখা গেল শিক্ষার্থীদের ভিড়। রোবটটি নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের জবাব ইংরেজিতে দিতে পারে।

সাইয়েদুল জানায়, সে আর তার বন্ধু অর্ক হাসান মিলে রোবটটি বানিয়েছে। খরচ পড়েছে ৪০ হাজার টাকা। রোবটটি শারীরিকভাবে অক্ষমদের বিভিন্ন কাজ করে এবং কথা বলতে পারে। একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের মাধ্যমে এটি কাজ করে।

১৯৭৮ সাল থেকে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের উদ্যোগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা উদ্‌যাপন করা হচ্ছে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছে, ৬০টির বেশি জেলা থেকে শিক্ষার্থী ও খুদে উদ্ভাবকেরা অংশ নিচ্ছেন। ২৫ জুন সন্ধ্যা সাতটায় থাকছে ‘সায়েন্স শো’ এবং মঞ্চস্থ হবে শওকত লাভলীর নির্দেশনায় বিজ্ঞানবিষয়ক নাটক। একই দিন জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মেলা শেষ হবে ২৬ জুন।