শেষ দিনে জনসংযোগের চেয়ে নেতা-কর্মীদের 'সাহস জোগাতে' ব্যস্ত হাসান সরকার

হাসান উদ্দিন সরকার। ফাইল ছবি
হাসান উদ্দিন সরকার। ফাইল ছবি

সকাল থেকেই গাজীপুরে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। যাঁদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না, তাঁদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে খোঁজখবর নিচ্ছেন। 

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট হবে ২৬ জুন। আজ রোববার সেখানে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন। তবে শেষ সময়ে জনসংযোগের চেয়ে নির্বাচন মোকাবিলায় নেতা-কর্মীদের শক্ত থাকার জন্য সাহস জোগাতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানিয়েছেন হাসান উদ্দিন সরকার।

আজ সকালে টঙ্গী পৌরসভা এলাকায় নিজ বাসভবনে বসে তাঁর নেতা-কর্মীদের হয়রানির খবর পাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে খবর পান তাঁর অন্যতম এজেন্ট ও টঙ্গী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ভেন্ডরের বাড়িতে পুলিশ গেছে। প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে জাহাঙ্গীর আলম ভেন্ডরের খোঁজ নেন হাসান উদ্দিন। তিনি তাঁকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘ভয় পাইয়ো না।’
পরে প্রথম আলোকে জানান, ডিবি পুলিশ গত দুই রাত জাহাঙ্গীর আলম ভেন্ডরের বাসায় গিয়েছিল। তখন তিনি বাসায় ছিলেন না।

পাশে বসে থাকা এক কর্মী হাসান উদ্দিন সরকারকে জানালেন, বাসন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় হামলা হয়েছে। তাঁর বাড়ির দরজা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এটা শুনে তিনি আলাউদ্দিনকে ফোন করেন। তাঁকে নির্ভয়ে কাজ করতে বলেন।

আজ নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে হাসান উদ্দিন সরকারকে জনসংযোগের চেয়ে নেতা-কর্মীদের খোঁজ নিতেই বেশি দেখা গেছে। যেখানে পারছেন যাচ্ছেন। যেখানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, সেসব নেতা-কর্মীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে সাহস জোগাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ বেলা ১১টায় টঙ্গী বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে গাজীপুরের জয়দেবপুরে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে যান হাসান উদ্দিন সরকার। সেখানে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন ও মতবিনিময় করেন। এ সময় বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী হয়রানির কথা বললে তিনি তাঁদের সাহস জোগান ও নির্বাচন শক্তভাবে মোকাবিলার কথা বলেন। ওই কার্যালয় থেকে বেলা দেড়টার দিকে পাশেই তাঁর দলের নেতা ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমান গোলাপের বাসায় যান। সেখানেও কয়েকজন নেতাকে সাহস জোগাতে নানা আশ্বাস দেন হাসান উদ্দিন সরকার।

সেখানে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত প্রচারের শেষ দিনে আমি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মনে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই সিটি করপোরেশনে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ভোট আছে। এখানে ৪২৫টি নির্বাচনী কেন্দ্র আছে। ২ হাজার ৭৬১টি বুথ আছে। এসব স্থানে নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ করা একটি বড় দায়িত্ব। এ ছাড়া তাদের নানা খোঁজখবর নিতে হচ্ছে। অনেক এজেন্টকে ভয় দেখানো হচ্ছে। তাঁদের মনে সাহস জোগাতে হচ্ছে। এ কাজ নিয়েই আমি ব্যস্ত। জনসংযোগের কাজ আগে যা করেছি, তা যথেষ্ট। এখন নেতা-কর্মীদের কাজের সমন্বয় করাই বড় এক চ্যালেঞ্জ।’

বেলা তিনটার দিকে মাহাবুবুর রহমান গোলাপের বাসা থেকে নিজের বাসায় আসেন হাসান উদ্দিন সরকার। সন্ধ্যায় তিনি আবারও নেতাদের সঙ্গে বসবেন।

হাসান সরকারের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মাজহারুল আলম বলেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সবাইকে সাহস জোগানোর কাজ করবেন মেয়র প্রার্থী। তিনি এখন নেতাদের সাহস দিচ্ছেন। জনসংযোগে গেলে নেতারা নির্বাচনের কাজ ফেলে তাঁর সামনে আসছেন। নেতাদের মাঠে সক্রিয় রাখতে তিনি এখন জনসংযোগ করছেন না। কৌশলে সবাইকে সক্রিয় রাখতে নিজেই ফোনে বা সরাসরি উপস্থিত হয়ে সাহস জোগাচ্ছেন।

মাজহারুল আলম আরও বলেন, নেতাদের শুধু সাহসই দিচ্ছেন না, পাশাপাশি প্রতিপক্ষের কৌশল কীভাবে মোকাবিলা করবেন, সে বিষয় নিয়েও আলোচনা করছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাজীপুর জেলা বিএনপির এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে আমাদের নেতা-কর্মীদের গণহারে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। বাসায় বাসায় পুলিশ গিয়ে হয়রানি করছে। এ সময় নেতা-কর্মীরা সাহস পাচ্ছেন না। তাঁদের সাহস দিতেই কাজ করছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী।’

আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে গাজীপুর কলেজগেটে নিজের বাসভবনে প্রথম আলোকে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, বাসন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় হামলা হয়েছে। তাঁর বাড়ির দরজা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তাঁকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে দেখা করতে বলেছে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আমাদের ডেকে নিয়ে যা তা বলে অপমান করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, এখানে একটি গোপন বৈঠক করেছে সরকার। এখানে খুলনার পুলিশ আনা হয়েছে। কিছুদিন আগে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে ম্যাকানিজম ব্যবহার করে জিতেছে আওয়ামী লীগ, এখানেও তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেন্দ্রে আমাদের এজেন্টদের আটকে রাখার চক্রান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের সময় আটকে রেখে তাঁদের কোনো কিছু করতে দেওয়া হবে না। তাঁদের নির্বাচন থেকে কীভাবে বাইরে রাখা যায়, সে চেষ্টা হচ্ছে। আমি সরকারকে আমাদের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’