গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে সরকারের কোনো মেসেজ নেই

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। প্রথম আলো ফাইল ছবি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। প্রথম আলো ফাইল ছবি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোটাররা যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে ভোট দেবেন। নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মেসেজ নেই। তবে যিনি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবেন, তাঁকেই ভোট দেবেন ভোটাররা। নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেবে—এটাই সরকারের প্রত্যাশা।

মন্ত্রী আজ রোববার দুপুরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট, সহকারী অ্যাডজুট্যান্ট, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা পদে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ ও প্যারেড পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন কান্তিকাল অতিক্রম করে দেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে। বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। বর্তমান সরকারের কর্মতৎপরতায় অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে শান্তির রোল মডেল হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে। এসব সম্ভব হয়েছে জননেত্রী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের গুণে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। সরকারের এ বিরাট সাফল্যের অংশীদার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীও।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে প্রশিক্ষণ। জাতীয় সংকটকালে এবং জরুরি মুহূর্তে এই বাহিনীর কর্মতৎপরতা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন ছাড়াও অপারেশন রেলরক্ষা মহাসড়কের নাশকতা রোধ মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ রুখতে আনসার বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব পালনকালে জননিরাপত্তা বিধান ও শান্তির সৈনিক হিসেবে আনসার বাহিনীর অবস্থান অত্যন্ত সুস্পষ্ট। আপনাদের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি, অর্থনীতি, অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশ আজ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আনসার বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ জনসম্পৃক্ত একটি শৃঙ্খলা বাহিনী। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বাহিনীর সদস্যরা শ্রম আর আন্তরিকতা দিয়ে দেশ ও জননিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এ বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্য সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, বিশেষ করে বিমানবন্দর স্থল ও জলবন্দরসহ বিভিন্ন কলকারখানায় জনসম্পদ রক্ষার্থে অতন্দ্রপ্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে সাড়ে ১৬ হাজার ব্যাটালিয়ন সদস্য পার্বত্যাঞ্চলের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে চলছেন। ১৯৯৮ সালে সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা প্রদান হতে শুরু করে আপনাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা বিসিএস কর্মকর্তাদের পদের মানোন্নয়ন—সবই বর্তমান সরকার করেছে।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, আনসারের কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে প্রথম শ্রেণির বিসিএস কর্মকর্তাসহ দ্বিতীয় শ্রেণি এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে এবং দুটি গার্ড ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এ ছাড়া কক্সবাজারে একটি, ফরিদপুরে একটি পদ্মা ব্রিজের দুই পাশে দুটি ব্যাটালিয়ন গঠনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। দ্রুত এই ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩৮ হাজার ৫০০ কেন্দ্রে লক্ষাধিক আনসার ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হবে।

কুচকাওয়াজ ও প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহম্মদ নূরুল আলম, উপমহাপরিচালক (প্রশাসন) কর্নেল মহিউদ্দীন মো. জাবেদ, উপমহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ) এ কে এম মিজানুর রহমান, উপমহাপরিচালক (অপারেশন) দিলীপ কুমার বিশ্বাস ও ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট (একাডেমি) সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ খালেদসহ ঊর্ধ্বতন অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মন্ত্রী সেরা চৌকস, ড্রিল ও ফায়ারার হিসেবে মাহবুব উজ জামান, মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন ও আশিকুর রহমানকে পুরস্কার প্রদান করেন।