ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সারা দেশে বিদ্যুতায়ন হচ্ছে না

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশের সব গ্রাহককে বিদ্যুৎ-সংযোগের আওতায় আনার সরকারি লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। শতভাগ বিদ্যুতায়নের কর্মসূচিতে সরকার বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সব গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার সরকারি লক্ষ্য পূরণ হতে আগামী বছরের (২০১৯ সাল) ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ ছাড়া দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চল এবং চরাঞ্চলের প্রায় তিন হাজার গ্রামেও আপাতত জাতীয় গ্রিডের সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের শতভাগ বিদ্যুতায়নের কর্মসূচি এই গ্রামগুলোকে বাদ দিয়েই সম্পন্ন করতে হবে। এসব গ্রামের সব গ্রাহকের জন্য মূলত সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে।

শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি সফল করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। সরকারের পরিকল্পনা ছিল ২০২০ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের। কিন্তু কাজের দ্রুত অগ্রগতির কারণে বিআরইবি এই সময়সীমা এগিয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করে। সে অনুযায়ী গড়ে প্রতি মাসে তিন লাখ নতুন সংযোগ দিতে থাকে বিআরইবি। কোনো কোনো মাসে প্রায় সাড়ে চার লাখ পর্যন্ত নতুন সংযোগ দিয়েছে সরকারি এই সংস্থাটি।

বিআরইবি সূত্র জানায়, গত মার্চ মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক কমিশনের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই খাতের অর্থ বরাদ্দ স্থগিত রাখা হয়। এরপর প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে কাজের গতি কমে গেছে।

সূত্র জানায়, গত মে মাস পর্যন্ত দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎ-সংযোগের আওতায় এসেছে। সারা দেশে মোট গ্রাহক এখন প্রায় তিন কোটি। বিদ্যুতের উৎপাদনও ১৬ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে (ক্যাপটিভ ছাড়া)। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সব গ্রাহকের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি হয়নি। অন্যদিকে সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক এলাকার গ্রাহকই বিদ্যুৎ পাচ্ছে না।

নাম না প্রকাশের শর্তে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, দুটি কারণে বিদ্যুতায়নের রাশ টানা হচ্ছে। এক, সংযোগ যত বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদাও ততই বাড়বে। সেই বর্ধিত চাহিদা পূরণ করা কতটা সম্ভব হবে, সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে। দুই, বিদ্যুতায়নের ক্ষেত্রে সরকারের প্রথম বিবেচনা ছিল এটা ২০২০ সালে শেষ করা হবে। কাজেই এর গতি এখন কিছুটা কমিয়ে দিলেও ওই সময় অতিক্রম করবে না।

বিআরইবির সূত্র জানায়, তাদের আওতাধীন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এলাকায় মোট গ্রামের সংখ্যা ৮৪ হাজার ১৫৯। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বিদ্যুতায়িত হয়েছে প্রায় ৭৩ হাজার গ্রাম (প্রায় ৮৬ শতাংশ)। বাকি প্রায় ১২ হাজার গ্রামের মধ্যেও প্রায় ৪ হাজার আংশিক বিদ্যুতায়িত।

বিআরইবির সূত্র জানায়, অবিদ্যুতায়িত গ্রামগুলোর মধ্যে প্রায় তিন হাজার বিচ্ছিন্ন গ্রামের অবস্থান কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, যশোর, সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলায়।

বিআরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মইন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পূর্ণ নিশ্চিত করতে ডিসেম্বরের পর কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে। আর প্রায় তিন হাজার গ্রামে গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সমস্যার কথা তাঁরা সরকারকে জানিয়েছেন।