মাদকেই শেষ পরিবারটি

>কুমিল্লায় মাদকাসক্ত বড় ভাইকে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা ছোট ভাইয়ের। সাড়ে তিন বছর আগে এই বড় ছেলের হাতে একইভাবে খুন হন বাবা।


প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে নেশার টাকা না পেয়ে বাবা ইউনুস মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন সোহেল রানা (২৮)। এবার সোহেলকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁরই ছোট ভাই মেহেদী হাসানের (২২) বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে মাদক সেবনের দায়ে তাঁদের আরেক সহোদর সুমন মিয়া (৩০) ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া ৬ মাসের সাজায় কারাগারে আছেন।

গত শনিবার রাতে কুমিল্লার দেবীদ্বার পৌরসভার মরিচাকান্দা এলাকায় বাবার মতো একই কায়দায় ছেলে খুনের এ ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার সকালে পুলিশ গিয়ে সোহেলদের বাড়ির পাশ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তাঁর ভাই হাফেজ এমরান দেবীদ্বার থানায় ভাই মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

পুলিশ বলছে, ডেকোরেটর ব্যবসায়ী মেহেদী হাসানকে গতকাল সকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে বড় ভাইকে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রড ও ছুরি তাঁর দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি সোহেল নেশার টাকার জন্য তাঁর বাবাকে হত্যা করেন বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন মেহেদী। তিনি বলেছেন, ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা ও মাদক মামলার আসামি হিসেবে কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি পুনরায় নেশার টাকার জন্য পরিবারের সদস্যদের জ্বালাতন করছিলেন। এতে পরিবারের সবাই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সোহেল বাড়ির পাশে পুকুরপাড়ে নেশা করছিলেন। তা দেখে তিনি (মেহেদী) বাড়ি থেকে রড ও ছুরি নিয়ে পুকুরপাড়ে গিয়ে তাঁকে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে গলায় ছুরি চালান। এরপর শরীরের বিভিন্ন অংশে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, সোহেলের লাশ বাড়ির পাশে রেখে নিজ দোকানে গিয়ে রক্তমাখা কাপড় ও ছুরি রেখে বাড়িতে ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন মেহেদী। গতকাল সকাল সাতটায় লাশ দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী খবর দিলে পুলিশ সেটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

মেহেদী দাবি করেন, তাঁর বাবা নিহত হওয়ার পর ডেকোরেটরের পারিবারিক ব্যবসা দেখেন তিনি। ওই দোকানে গিয়েও নেশার টাকা চাইতেন বড় ভাই। তাঁর কারণে পরিবারের সদস্যরা এলাকাবাসীর কাছে মানসম্মান খোয়াচ্ছিলেন।

মামলার বাদী এমরান বলেন, সোহেল রানা মাদকাসক্ত ছিলেন। তিনি বাবাকেও নেশার টাকার জন্য হত্যা করেছেন। এখন মাদকের জন্য তিনিও খুন হলেন।

দেবীদ্বার থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘পরিবারের কয়েকজন সদস্য আসক্ত। সোহেল এর আগে তাঁর বাবাকে হত্যা করেছিলেন। শনিবারের ঘটনায় একমাত্র আসামি মেহেদীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’