বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আত্মসমর্পণের পর কারাগারে

বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক বিন জোহর আত্মসমর্পণ করেছেন। আজ সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪–এর বিচারক আবদুর রহমান সরদার তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

ওই ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া তারেক বিন জোহর রায় ঘোষণার আগে থেকে পলাতক ছিলেন। আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্মমভাবে পেটান ও কোপান। বাঁচার জন্য দৌড় দিলে তিনি শাঁখারীবাজারের রাস্তার মুখে পড়ে যান। রিকশাচালক রিপন তাঁকে রিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক বিশ্বজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সময় বিশ্বজিৎ লক্ষ্মীবাজারের বাসা থেকে শাঁখারীবাজারে নিজের দরজি দোকানে যাচ্ছিলেন।

হত্যার ঘটনায় ওই রাতে সূত্রাপুর থানায় মামলা করে পুলিশ। পরদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন। এরপর সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়।

তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ডিবি পুলিশ। ২৬ মে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।

এ মামলার আসামিদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, রাশেদুজ্জামান, কাইয়ুম মিয়া, এস এম কিবরিয়া, এমদাদুল হক, সাইফুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফা গ্রেপ্তার হন। বাকি ১৩ আসামি রাজন তালুকদার, ইউনুস আলী, আজিজুল হক, তারেক বিন জোহর, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, মীর মো. নূরে আলম, আল আমিন শেখ, মনিরুল হক, কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন পলাতক ছিলেন।

দেশব্যাপী আলোড়ন তোলা এই হত্যা মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। বাকি ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়।

আদালত সূত্র বলছে, গত বছরের ১ নভেম্বর বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অপর দুজনকে খালাস দিয়ে গত বছরের ৬ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে যে দুজন আপিল করেন, তাঁরা খালাস পান।

নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া খালাসপ্রাপ্ত দুজন হলেন, সাইফুল ইসলাম ও কাইয়ুম মিয়া। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া চার আসামি হলেন, মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন, ইমদাদুল হক ও নূরে আলম (পলাতক) ওরফে লিমন।

এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি হলেন, রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল ও রাজন তালুকদার (পলাতক)। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডিত ১৩ আসামির মধ্যে দুজন খালাস পেয়েছেন। তাঁরা হলেন, এইচ এম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া অপর ১১ আসামি পলাতক আছেন।