বড় এলাকার কাউন্সিলর, কিন্তু মূল্যায়ন কম

‘ম্যাডাম, আপনাকে তো সেই নির্বাচনের সময়ে দেখছি, আর খোঁজ থাকে না।’ ভোট চাইতে গিয়ে এ ধরনের কথা প্রায়ই শোনেন সংরক্ষিত ১৬ আসনের নারী কাউন্সিলর প্রার্থী হাছিনা মমতাজ। এই প্রার্থীসহ প্রায় সব নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর একই কথা—পুরুষদের চেয়ে মূল্যায়ন কম, বরাদ্দ কম। কিন্তু এলাকা বেশি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাছিনা মমতাজ এবার টঙ্গী থানাধীন ৪৬, ৪৭, ৪৮ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ১৬ আসনের জন্য প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কাজের ক্ষেত্রে পুরুষ কাউন্সিলরদের চেয়ে আমরা সেভাবে অগ্রাধিকার পাই না। আমাদের মনে করা হয় যে কোনো কাজ করতে হয় না। ভোট চাইতে গিয়ে ভোটারদের কাছে বিব্রত হই। কিন্তু একসঙ্গে তিনটি ওয়ার্ড সামলাতে হয়। সব ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগও করা যায় না।’ এই প্রার্থী ‘সংরক্ষিত’ তকমা থেকে মুক্তি চান। সাধারণ প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করতে চান।

ভোটারদের প্রত্যাশা তাঁর কাছে কী ছিল—জানতে চাইলে হাছিনা বলেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও গার্মেন্টস-কর্মীরা চলাফেরায় নিরাপত্তা চেয়েছে। পথঘাটে হয়রানির শিকার যেন না হন, সেই দাবি ছিল।
আয়েশা আক্তার সংরক্ষিত ১০ আসনের প্রার্থী। তিনি নির্বাচিত কাউন্সিলর। এবারও প্রার্থী হয়েছেন। বিভিন্ন নাগরিক সনদে সই করার ক্ষমতা না থাকায় জনগণের কাছেও তেমন মূল্যায়ন নেই বলে জানান। আয়েশা বলেন, ‘একজন পুরুষ কাউন্সিলর যে পরিমাণ বরাদ্দ পান, আমরা নারীরা তিন ওয়ার্ডের জন্য সমপরিমাণ বরাদ্দ পাই। যেটা যথেষ্ট নয়।’

আয়েশা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ১৯ জন নারী কাউন্সিলর। আগামীকালের ভোটে যদি নির্বাচিত হন, তবে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সবাইকে নিয়ে আবেদন করবেন যাতে সনদে সই ও বরাদ্দ বাড়ানোসহ বিভিন্ন ক্ষমতা দেওয়া হয়।

বাড়িয়ালীর নারী প্রার্থী আমেনা খাতুন এই তিন ওয়ার্ডের হিসাব নিয়ে হতাশ। তিনি বলেন, ‘আফা গো একলগে তিন ওয়ার্ড দিয়া আমাগো জীবন শ্যাষ কইরা দিছে। আমার এইখানে ৬৫ হাজার ভোটার। কাজ কী করুম।’ তবুও তাঁর আশা, ভোটাররা তাঁকে নির্বাচিত করবেন। আমেনা সংরক্ষিত ১০ আসনের প্রার্থী।

সংরক্ষিত ৫ আসনের প্রার্থী বকুল আক্তারের কাছে তাঁর ভোটাররা মাদকমুক্ত এলাকার দাবি জানিয়েছেন। তিনি জানান, মূলত নারী ভোটাররা তাঁর কাছে আসেন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। বরাদ্দ কম পান বলে উন্নয়নকাজে তেমন সুবিধা করতে পারেন না।

ক্ষমতা যা আছে তা নিয়েই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা। আশা করছেন, এবার নির্বাচিত হয়ে নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করবেন নাগরিকদের সুবিধা দিতে।

শিববাড়ী মোড়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের যে ক্ষমতা, তা দিয়ে সুপারিশ করা ছাড়া তেমন কিছু করার সুযোগ থাকে না।