ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তেলবাহী ট্রেনের ৯ বগি লাইনচ্যুত, ট্রেন চলাচল ব্যাহত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা জ্বালানি তেলবাহী একটি ট্রেনের নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে পড়ে। এতে ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচলকারী সব ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের কলেজপাড়া ও শিরাইলকান্দি এলাকায় ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেললাইনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে ঢাকা ও আখাউড়া থেকে দুটি উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করে। বেলা সাড়ে ১১টার পর ওই পথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
দুর্ঘটনা তদন্তে ঢাকা রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা রেজাউল হককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন রেল কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী মেকানিক্যাল প্রকৌশলী রাশেদ লতিফ, সহকারী মেকানিক্যাল প্রকৌশলী (ক্যারেজ) রাসেল আলম, সহকারী সংকেত প্রকৌশলী রেজওয়ানা হোসাইন, সহাকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে আখাউড়া স্টেশনে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস আটকা পড়ে। পরে সেটি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সোয়া নয়টার দিকে আখাউড়া রেলওয়ে জংশনে আটকা পড়া উপকূল এক্সপ্রেস পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস সাড়ে ১১টার দিকে এবং চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী সাড়ে ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন ত্যাগ করে।
স্থানীয় লোকজন, ফায়ার সার্ভিস, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনের পেছনের দিকের নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে পড়ে। এ সময় বগিগুলোতে থেকে ডিজেল আশপাশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। খবর পেয়ে সদর থানা-পুলিশ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এবং আখাউড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এবং রেলের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পরে রাত দেড়টার দিকে লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে পাড়া বগিগুলোকে রেখে অন্য বগিগুলোকে নিয়ে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।
আজ সকালে ঢাকা থেকে একটি ও আখাউড়া থেকে একটি উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে রেলওয়ের প্রায় শতাধিক কর্মী উদ্ধার কাজ শুরু করেন। সাড়ে ১১ টার দিকে চট্টগ্রাম রেলপথে (ডাউন লাইন) ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্ধারকাজ পুরোপুরি শেষ হতে কিছু সময় লাগবে। আমরা আপাতত রেললাইন দিয়ে যেন ট্রেন চলাচল করতে পারে সে ব্যবস্থা করছি।’
আজ সকাল আটটা থেকে ১০টা পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থলে দেখা যায়, রেলের বগিগুলো রেললাইনের পাশে উল্টে পড়েছে। বগিগুলোতে থাকা ডিজেল রাস্তার পাশের বেশ কয়েকটি ডোবায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। রেললাইনের ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ ফুট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় রেললাইন আঁকাবাঁকা হয়ে গেছে। রেললাইনের অনেক স্লিপার ভেঙে গেছে। রেললাইনের নিচের মাটি ও পাথর সড়ে গেছে। স্থানীয় কলেজপাড়া ও শিমরাইলকান্দি এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডিজেল থেকে আগুন ধরে যাওয়ার ভয়ে ওই সব এলাকার রেললাইন সংলগ্ন কয়েকটি পরিবার রাতেই আত্মীয়স্বজনের আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
স্থানীয় আরমান মিয়া, নোমান মিয়া ও আশফাক হোসাইন বলেন, ট্রেনের সব তেল পাশের ডোবাতে গিয়ে পড়েছে। এ জন্য লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। কারণ কেউ যদি সিগারেট খেয়ে দেশলাই বা আগুনের কোনো একটি অংশ ডোবায় ফেলে তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক শারফুল আহসান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট উদ্ধার কাজে রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত রয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তাও দেওয়া হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান জানান, ডোবায় গিয়ে জমা হওয়া ডিজেল সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকজন সরানোর ব্যবস্থা করছে।