হঠাৎ আলোচনায় ইসলামী আন্দোলন

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফলে বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরেই চলে আসছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাম। ৩১ বছর বয়সী এই দলটি সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট রাজনীতি ও ভোটের খবরাখবর রাখেন—এমন মানুষের কাছে চমক সৃষ্টি করছে। দলটি এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নিজেদের শক্তি দেখাতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

সদ্য শেষ হওয়া গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলে দলটির অবস্থান তৃতীয়। এখানে তাদের মেয়র প্রার্থী মো. নাসিরউদ্দিন হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ২৬ হাজার ৩৮১ ভোট। এবারই প্রথম তারা এই সিটিতে নির্বাচনে অংশ নেয়। এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী পান ১৬৫৯ ভোট এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী পান ৯৭৩ ভোট।

খুলনা সিটির নির্বাচনেও প্রথমবার অংশ নিয়ে ইসলামী আন্দোলন পায় ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট। এটি ছিল ওই নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট। খুলনা সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী পান ১ হাজার ৭২৩ ভোট। আর সিপিবির প্রার্থী পান ৫৩৪ ভোট।

এর আগে ২০১৫ সালে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির  পরেই তৃতীয় অবস্থানে ছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ঢাকা উত্তরে তাদের প্রার্থী শেখ ফজল বারী মাসউদ পেয়েছিলেন ১৮ হাজার ভোট। আর দক্ষিণে আবদুর রহমান পান ১৫ হাজার ভোট।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নীরবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান জানান নিচ্ছে। রাজনীতিতে তেমন কোনো আলোচনায় না থেকেও ইসলামী শাসনতন্ত্রে বিশ্বাসী এই দলের ভোটের হিসাব চমক তৈরি করছে।

১৯৮৭ সালে চরমোনাই পীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এর আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে তারা সাত দল মিলে ইসলামী ঐক্যজোটের অধীনে নির্বাচন করে। এ দুবারই তাদের দুজন প্রতিনিধি সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০১–এর নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জোট বাঁধে এরশাদের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জোট থেকে বের হয়ে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। সেবার ১৬০ আসনে প্রার্থী দিয়ে তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের বাইরে একমাত্র দল হিসেবে মোট ভোটের ১ শতাংশের বেশি ভোট পায়। দলটি বলছে, আগামী নির্বাচনে তাদের ভোট আরও বাড়বে। তবে এই দলের কোনো কোনো নেতা মনে করেন, ভোট বাড়লেও এককভাবে নির্বাচন করে সংসদে আসন পাওয়াটা কঠিন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে দলটি অংশ নেয়নি। এ ব্যাপারে দলের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আশরাফ আলী আকন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন হওয়ায় আমরা প্রত্যাখ্যান করি।’ তবে তাঁরা সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রায় সব কটিতেই অংশ নিচ্ছে।

২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আলা উদ্দিন আলাল। নৌকার প্রার্থীকে ২১৮ ভোটে হারান তিনি।

এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও দলটি চমক দেখিয়েছে। সেখানেও তাদের প্রার্থীরা অন্যদের চেয়ে ভালো ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। এ জুলাইয়ে হতে যাওয়া বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহীতেও তাঁদের প্রার্থী রয়েছে। আশরাফ বলেন, ‘তিন সিটিতেই প্রার্থী দিয়েছি। আশা করি ভালো প্রতিযোগিতা হবে।’ তবে বরিশাল ও সিলেটের ব্যাপারে তাঁরা একটু বেশি আশাবাদী। তিনি বলেন, এই শহর দুটিতে তাঁদের ভালো জনসমর্থন রয়েছে।

কোনো জোটে না থেকে এককভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির পরেই নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে আশরাফ বলেন, ‘মানুষ দেশে পরিবর্তন চায়। দূষিত কলঙ্কিত রাজনীতি আর দেখতে চায় না। আমরা মানুষের কথা বলতে পারছি। সে জন্যই মানুষ আমাদের ভোট দিচ্ছে।’

দলটির এই রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সবগুলোতে আমরা তৃতীয় হয়েছি। আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৩০০ আসনের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তাঁদের নিয়ে আমরা কাজও শুরু করে দিয়েছি।’ তিনি জানান, ইতিমধ্যে তাঁরা রংপুরের ছয় আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন। খুব বেশি পুরোনো কোনো দল না হয়েও একক দল হিসেবে নির্বাচন করে নিজেরা রাজনীতির মাঠে শক্ত অবস্থানে আছে। তাঁদের আশা, সামনের নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে তাঁদের অবস্থান আরও পোক্ত হবে।