ঢাবি সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ক্লাস বর্জন, প্রতিবাদ

নিরাপদ ক্যাম্পাস ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’দের ব্যানারে মানববন্ধন করেন কয়েক শ শিক্ষার্থী। মোকাররম ভবনের সামনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১১ জুলাই। ছবি: ফোকাস বাংলা
নিরাপদ ক্যাম্পাস ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’দের ব্যানারে মানববন্ধন করেন কয়েক শ শিক্ষার্থী। মোকাররম ভবনের সামনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১১ জুলাই। ছবি: ফোকাস বাংলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মশিউর রহমানের মুক্তির দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি করেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মশিউর কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক।

আজ বুধবার সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের পাঁচতলায় বিভাগের চত্বরে মশিউরের সহপাঠীরা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তাঁরা বিভাগের কলাপসিবল গেট ও শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন শিক্ষার্থীদের বাধা দেন। তিনি পুলিশ এনে শিক্ষার্থীদের তুলে দেওয়ার হুমকি দেন। মোবাইলে আন্দোলনকারীদের ছবি তোলেন।

অবস্থান চলাকালে শিক্ষার্থীরা মশিউরসহ কোটা আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের নিন্দা জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নীরব ভূমিকারও নিন্দা করেন।

বিভাগের একজন শিক্ষার্থী প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, ‘মশিউরকে অন্যায়ভাবে হল থেকে উঠিয়ে নিয়ে মারধর করে পুলিশের কাছে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না। আমরা মশিউরের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস করব না। দু-একজন শিক্ষক আমাদের জোর করে ক্লাসে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।’ শিক্ষার্থীরা মশিউরের মুক্তির দাবিতে বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টরকে চিঠি দেবেন জানিয়ে ওই শিক্ষার্থী বলেন, সন্তোষজনক উত্তর না পেলে তাঁরা রোববার আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।

ক্যাম্পাসে অন্যান্য কর্মসূচি
নিরাপদ ক্যাম্পাস ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’দের ব্যানারে মোকাররম ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন কয়েক শ শিক্ষার্থী। তাঁরা ‘হাতুড়ির জ্ঞান পেরেকের ওপর, ছাত্রের উপর নয়’, ‘ছাত্রের দায় নিবেন না কেন?’, ‘আমার ক্যাম্পাসে আমি নিরাপদ তো’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন।

এতে সংহতি প্রকাশ করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন ও অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজিমউদ্দীন খান, অর্থনীতি বিভাগের রুশদ ফরিদী প্রমুখ।

বামপন্থী ছয়টি ছাত্রসংগঠনের মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা দুপুরে মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষণশীল করার সিদ্ধান্ত’ বাতিলের দাবি জানান। লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন ছাত্র নিপীড়নের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যেখানে সারা দেশের মানুষ মিডিয়ার মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নিপীড়নের খবর সম্পর্কে অবগত, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছু জানে না, শোনেনি। এ ধরনের বক্তব্য শুধু দায়িত্বহীনতাই নয়, তা সন্ত্রাসী হামলায় সহযোগিতার নামান্তর।’

সংবাদ সম্মেলনে জোটের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাস, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী-বাসদ সমর্থিত) সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক আলমগীর সুজন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের ছয় দফা দাবি জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। তাঁদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া সব শিক্ষার্থীর মুক্তি, আহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে চিকিৎসা করানো, হামলাকারীদের শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়া ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পড়েন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অরণি সেমন্তি খান।