বিএনপি প্রার্থীর পোস্টার ছেঁড়া ও পুলিশি অভিযানের অভিযোগ

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণায় শহরের বেশির ভাগ এলাকা নৌকা প্রতীকের পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। গতকাল নগরের আরডিএ মার্কেটের সামনে।  ছবি: প্রথম আলো
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণায় শহরের বেশির ভাগ এলাকা নৌকা প্রতীকের পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। গতকাল নগরের আরডিএ মার্কেটের সামনে। ছবি: প্রথম আলো
>
  • নৌকার পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহর।
  • অন্যরা জায়গা পাচ্ছেন না।
  • অভিযোগ অস্বীকার আওয়ামী লীগের।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রচারের দ্বিতীয় দিনেই বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পোস্টার-ফেস্টুন ছেঁড়া ও প্রচারে বাধা দেওয়া এবং নেতা-কর্মীর বাড়ি বাড়ি পুলিশের অভিযানের অভিযোগ উঠেছে।

বিএনপির প্রার্থীর পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক ও এলাকা নৌকা প্রতীকের পোস্টার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। অন্য প্রার্থীরা বলছেন, তাঁরা পোস্টার লাগানোর জন্য ফাঁকা জায়গা পাচ্ছেন না।

গতকাল দুপুরে নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রায়পাড়ায় গণসংযোগ চালানোর সময় বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এই প্রতিবেদককে বলেন, তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ অভিযান চালিয়ে হয়রানি করছে, আটক করছে। পোস্টার-ফেস্টুন লাগাতে বাধা দিচ্ছে, ছিঁড়ে ফেলছে।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক বলেন, মঙ্গলবার রাতে ৮ নং ওয়ার্ডের যুবদলের সাবেক সভাপতি ওয়ালিউল হকের কাজিহাটার বাসায়, ১ নং ওয়ার্ডের বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আসলাম, একই ওয়ার্ডের যুবদল কর্মী মামুন ও ফারুকের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। টের পেয়ে তাঁরা বাড়ি থেকে সটকে পড়ে গ্রেপ্তার এড়িয়েছেন।

মঙ্গলবার রাতে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তাদের পাঁচজন কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে। তবে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের জন্য বাড়ি বাড়ি পুলিশের অভিযানের কোনো ঘটনা এখানে নেই। পাঁচজনকে আটকের ঘটনাও ঠিক নয়।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘আটকের কোনো খবর আমরা পাইনি। কেবল দুই পক্ষের মারামারির কারণে একজনকে আটকের কথা শুনেছি।’

বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ১ নং ওয়ার্ডের কাশিয়াডাঙ্গায়, ১৯ নং ওয়ার্ডের কানামোড়, ২০ নং ওয়ার্ডের বেলদারপাড়া ও ৮ নং ওয়ার্ডে তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং পোস্টার লাগাতে দেয়নি।

বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট ও জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন গতকাল বিকেলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে বলা হয়, গতকাল বেলা ১১টায় পুলিশ ভ্যানের উপস্থিতিতে ১৩ নং ওয়ার্ডে শহীদ নজমুল হক উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণালীর পেছনের মোড় পর্যন্ত রাস্তায় ধানের শীষ প্রতীকের কোনো ফেস্টুন ও পোস্টার লাগাতে দেননি আওয়ামী লীগের কর্মীরা।

এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বালিয়াপুকুর মোড় থেকে রুয়েট ও ভদ্রার মোড় পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীকের লাগানো সব ফেস্টুন খুলে ফেলা হয়। একই রাতে অলকার মোড় থেকে আলুপট্টির মোড় পর্যন্ত এবং রাজশাহী সিটি কলেজ গেট থেকে সার্ভে ইনস্টিটিউট পর্যন্ত লাগানো ধানের শীষ প্রতীকের সব ফেস্টুন খুলে ফেলা হয়। একই দিন ২০ নং ওয়ার্ডে বেলদারপাড়ায় নৌকা প্রতীকের কর্মীরা ধানের শীষ প্রতীকের টানানো ফেস্টুন ভাঙচুর করে এবং ঝোলানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। ৬ নং ওয়ার্ডে জিপিওর সামনে, ১৯ নং ওয়ার্ডে ছোট বনগ্রাম এলাকায়, ২৭ নং ওয়ার্ড বালিয়াপুকুর এলাকায় ও ৩০ নং ওয়ার্ড বিনোদপুর বাজারে মাইকে বিএনপির প্রার্থীর প্রচারে বাধা দেওয়া হয়।

এসব অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ডাবলু সরকার। তিনি বলেন, ‘বাধা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তারা বললে আমি দাঁড়িয়ে থেকে তাদের পোস্টার-ফেস্টুন লাগাতে সহযোগিতা করব।’

বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান ঢাকার পথে আছেন। শুক্রবার রাজশাহীতে ফিরবেন। কোনো অভিযোগ জমা পড়লে সেদিন তা দেখতে পারবেন।

এর আগে গত সোমবার বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল নতুন মামলা দিয়ে তাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ওইদিন রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছিলেন, অভিযোগ তিনি পুলিশ কমিশনারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সে ব্যাপারে পুলিশ কিছু জানিয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা গতকাল বলেন, এখন পর্যন্ত জানায়নি। হয়তো তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে তার পরে ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে আ. লীগের মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট দলের মহানগর সহসভাপতি নওশের আলী গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন। এতে বলা হয়েছে, বিএনপি অপপ্রচার চালাচ্ছে যে আ. লীগ জিতলে শ্রীরামপুর এলাকার বস্তি উচ্ছেদ করবে এবং নিউ মার্কেট ভেঙে ১০ তলা করবে।

এ ব্যাপারে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘আমরা এরকম কিছু জানি না। ওরা একটা মিথ্যা অভিযোগ খাড়া করার চেষ্টা করছে।

সর্বত্র নৌকার পোস্টার, অন্যরা ঠাঁই পাচ্ছে না
গতকাল নগর ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব প্রধান সড়ক, সড়ক বিভাজক ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নৌকা প্রতীকের পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। অন্য দলের প্রার্থীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ প্রথম দিনেই পোস্টার ও ফেস্টুন এমনভাবে লাগিয়েছে যে আর কারও জন্য সুযোগ রাখা হয়নি। এ বিষয়ে ডাবলু সরকার প্রথম আলোকে বলেন, আগে থেকে প্রস্তুতি থাকায় তাঁরা প্রথম দিনেই বেশি পোস্টার-ফেস্টুন লাগিয়ে ফেলেছেন। তবে এখনো অনেক জায়গা আছে, অন্য প্রার্থীরা লাগাতে পারেন।

গতকাল গণসংহতি আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদের পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করে দলটির প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের বলেন, যেভাবে মাত্র একজন প্রার্থীর ফেস্টুনে শহর ছেয়ে গেছে, তা স্পষ্টতই নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ নিয়ে শহরে সারা দিন ঘুরছেন। কোথায় কে কী অনিয়ম করছে, তাঁরা এগুলো দেখবেন।