বগুড়ার ধুনটে আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টায় আ.লীগের নেতাসহ আটক ১০

আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করার সময় বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের পুলিশ লাঠিপেটা করে। ছবি: মাসুদ রানা
আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করার সময় বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের পুলিশ লাঠিপেটা করে। ছবি: মাসুদ রানা

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই নেতার নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ এক দল গ্রামবাসী থানায় হামলা করে আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা করে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীকে ছত্রভঙ্গ করে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের দুই নেতাসহ ১০ জনকে আটক করা হয়। আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে থানা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

আটক দশজনের মধ্যে ছয়জনকে মুচলেকা নিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং বাকি চারজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে প্রতিবেশী ফজর আলীর দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছে। বিরোধপূর্ণ ওই সীমানায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ফজর আলী একটি নলকূপ স্থাপন করছিলেন। এ সময় আনোয়ার হোসেন বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আনোয়ার হোসেন ও ফরজর আলী এবং তাঁর স্ত্রী অবিরণ নেছাসহ দুই পক্ষের তিনজন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আনোয়ার হোসেনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ফজর আলী ও তাঁর স্ত্রী অবিরণ নেছা ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষই থানায় পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দেয়।
গতকাল শনিবার রাতে আনোয়ার হোসেনের ছেলে আল্লামা ইকবালের দেওয়া অভিযোগটি থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণ করে ওই রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আসামি ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্যদিকে ফজর আলীর অভিযোগটি থানায় মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এতে ফজর আলীর পক্ষের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আজ সকালে ফজর আলীর পক্ষে এলাঙ্গী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুল মান্নান ও ক্রীড়া সম্পাদক আবু হানিফ মাইকিং গ্রামবাসীকে একত্রিত করে থানার প্রধান ফটকে এসে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের ওই দুই নেতার নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে আসামিকে বের করে নিয়ে যাওয়ার জন্য থানার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তখন থানা-পুলিশ লাঠিপেটা করে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় থানার প্রধান ফটক থেকে আওয়ামী লীগের দুই নেতা আবদুল মান্নান (৪০) ও আবু হানিফসহ (৩৫) ১০ জনকে আটক করে পুলিশ।

আটক ব্যক্তিদের মধ্যে গোলাম সরোয়ার, নাজমুল হোসেন, সুমন ইসলাম, শিরিন আকতার, চান মিয়া ও শামসুল হক থানায় হামলা চালানোয় নিজেদের ভুল স্বীকার করায় এলাঙ্গী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ তারেকের জিম্মায় বেলা দেড়টার দিকে মুক্তি দেওয়া হয়।
অন্যদিকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আওয়ামী লীগের দুই নেতা আবদুল মান্নান ও আবু হানিফসহ ফজর আলী ও তাঁর ভাই নবীর উদ্দীনকে আদালতে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে বেলা দুইটার দিকে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ তারেক বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কারণে থানা-পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পরে ছয়জনকে আমার জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যরা এজাহারভুক্ত আসামি হওয়ায় তাঁদের আদালতে পাঠায় পুলিশ।’
থানাহাজতে আটক আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল মান্নান ও আবু হানিফ বলেন, ‘ফজর আলীর মামলা না নিয়ে অন্যায়ভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে থানায় এসে পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। আসামি ছিনতাইয়ের কোনো চেষ্টা করা হয়নি। আমাদের নামে মামলা হওয়ার বিষয়ে জানা ছিল না। গ্রামবাসীর সঙ্গে ফজর আলীর ঘটনা জানতে এসে থানা ফটক থেকে আমাদের আটক করা হয়েছে।’
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. এরফান বলেন, মারপিট মামলার আসামিকে নিতে গ্রামবাসী জোর করে থানার ভেতরে আসার চেষ্টা করেছে। এ সময় তাদের বাধা দেওয়া হয়, কোনো লাঠিপেটা করা হয়নি।