ঢাকার মিরপুরে আমের গলি

বাড়ির সামনে আমের দোকান খুলে বসেছেন অনেকে।  ছবি: প্রথম আলো
বাড়ির সামনে আমের দোকান খুলে বসেছেন অনেকে। ছবি: প্রথম আলো

গলিটিতে বাড়ি আছে ১৭টি। প্রতিটি বাড়ির সামনেই দু-একটি করে দোকান। হয় বাড়ির মালিকেরা নিজেরা দোকান করেন, না হয় ভাড়া দেন। বাড়িগুলোর আকৃতি বা নির্মাণশৈলী ভিন্ন হলেও দোকানের ক্ষেত্রে একটি মিল চোখে পড়ে। সবগুলো দোকানে কেবল একটি ফলই বিক্রি হচ্ছে—আম।

মিরপুর ১১ নম্বরের ‘ই’ ব্লকের ১ নম্বর গলির চিত্র এটি। গলিটি আদর্শনগর (বাইশতলা বিল্ডিং) থেকে শুরু হয়ে কালশী ট্রাকস্ট্যান্ডে শেষ হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ‘ফলপট্টি’ নামে পরিচিত গলিটিতে পা রাখতেই আমের ম-ম সুবাস মেলে।

গলিটির বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, ১৫ বছর আগে এখানে ফলের ব্যবসা শুরু হয়। একটি বাড়ির দেখাদেখি অন্য বাড়ির মালিকও দোকান খুলে বসেন। এখন প্রতিটি বাড়ির সামনে ফলের দোকান। সারা বছরই বিভিন্ন মৌসুমি ফল বিক্রি হয়। তিনি বলেন, আগের বছরগুলোতে নানা স্বাদের ফল বিক্রি হতো। তবে এবার একচেটিয়াভাবে চলছে আম।

আবদুর রহমানের কথা শেষ না হতেই আরেক বাসিন্দা লিমা বেগম বলেন, গলিতে আমের ব্যবসা শুরু হওয়ায় ভালোই হয়েছে। বাড়িতে বসে রোজগার হয়, পাড়ার মানুষও অল্প টাকায় আম খেতে পারে।

গতকাল সোমবার দুপুরে গলিটি ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে আমের ক্যারেট (প্লাস্টিকের ঝুড়ি) উঁচু করে রাখা। তাতে ঠাঁই পেয়েছে হাঁড়িভাঙা, রুপালি, ফজলি (সুরমা), হিমসাগরসহ নানা জাতের আম।

দোতলা ভবনের মালিক কামাল হোসেন নিজেই দোকান খুলে বসেছেন। তিনি বলেন, তাঁর দোকানে গড়ে প্রতিদিন ৭০-৮০ ক্যারেট আম বিক্রি হয়। কোনো কোনো দিন ১০০ ক্যারেট ছাড়িয়ে যায়। তাঁর দোকানে আম কিনতে এসেছেন মিরপুরের পর্বতা থেকে খুচরা ফল ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন। দরদাম করে পাঁচ ক্যারেট আম কেনেন হেলাল। এখান থেকে আম কেনার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যাতায়াত খরচ কম পড়ে। বাকিতে কেনা যায়। আমের মানও ভালো থাকে।

দোকানিরা জানালেন, এখানে খুচরা ও পাইকারি—উভয় ধরনের ক্রেতা আসে। তবে বেশির ভাগ পাইকারি ক্রেতা আসেন মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা, ভাষানটেক ও উত্তরা থেকে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জমজমাট বেচাবিক্রি চলে। তারপর ইচ্ছানুযায়ী কেউ দোকান খোলা রাখেন, কেউ বিশ্রাম নেন। সন্ধ্যার দিকে আরেকবার বিক্রি চলে।

গলির বাসিন্দা আবদুল হাকিম জানান, আম ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ মৌসুমি বিক্রেতা। লাভজনক হওয়ায় এবং নিজের বাড়িতে ব্যবসার সুযোগ থাকায় তাঁরা এ কাজ করছেন। বছরের বাকি সময় তাঁরা অন্য কাজ করেন। এ বছর ছয়জন নতুন ব্যবসায়ী যুক্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি।