বরিশালের ছয় মেয়র প্রার্থীর ভাবনাতেও 'খুলনা-গাজীপুর'

খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মতো নির্বাচন বরিশালেও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব দলের মেয়র প্রার্থীরা। বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনই বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গাজীপুর ও খুলনায় সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দিলেও তা হয়নি। এ অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত। গতকাল সোমবার বিকেলে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় নিজেদের আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন তাঁরা।

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে আয়োজিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার, বাসদের প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন, সিপিবির আবুল কালাম আজাদ, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা ওবায়দুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বশির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালট বাক্সে সিল মারা ভোট ঢোকানোর আশঙ্কার কথা জানান বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। এটি বন্ধ করতে তিনি ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও ভোটবাক্স পাঠানোর অনুরোধ করেন। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও ভোটবাক্স পাঠানোর সুযোগ নেই। গাজীপুরের যেসব কেন্দ্রে ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে, তার কারণ উদ্‌ঘাটনে ইসি কাজ করছে। বরিশালের ভোটে কোনো কারচুপি হবে না বলে প্রার্থীদের আশ্বস্ত করেন তিনি।

সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ নিয়ে প্রার্থীদের আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, খুলনা ও গাজীপুরের মতো নির্বাচন হবে না। বরিশালে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। বরিশালের নির্বাচন হবে মডেল। এই মডেল অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন হবে।

একজন মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধির বেশির ভাগ ধারাই মানছেন না বলে সভায় অভিযোগ করেন বরিশাল সিটি নির্বাচনের একমাত্র নারী মেয়র প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী। তবে ওই প্রার্থীর নাম বলেননি তিনি।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, অন্য প্রার্থীরা তাঁর দিকে ইঙ্গিত করে অনেক কথা বলেছেন। তাঁর সম্পর্কে অনেকে মিথ্যাচার করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। বরিশালে সুষ্ঠু নির্বাচন চান তিনি।

নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আপনারা যদি মনে করেন গাজীপুর-খুলনায় সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, তবে আমার কিছু বলার নেই। যদি বলেন সেখানে কিছুই হয়নি, তাহলে যা হয়েছে সেটা আপনারা করেছেন। আমরা সবাই চাই এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।’

গাজীপুর ও খুলনায় সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ায় প্রার্থীরা ইসির প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না বলে জানান ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান। এরপরও বরিশালে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রার্থীরা আশাবাদী থাকতে চান বলে জানান তিনি।

এর আগে গতকাল সকালে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বরিশাল সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ থাকার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে কোনোভাবেই অবাঞ্ছিত কোনো ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ব্যালটে সিল দেওয়া প্রতিরোধ করা হবে। পছন্দের প্রতীকে ভোট দিয়ে ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।