মানুষের যেমন নিরাপত্তা নেই, তেমনি ব্যাংকগুলোতেও কোনো নিরাপত্তা নেই: মোশাররফ

খন্দকার মোশাররফ হোসেন
খন্দকার মোশাররফ হোসেন

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড এবং রিজার্ভ চুরির বিচার চায় বিএনপি। এসবের বিচার না হলে একদিন সবাইকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ মন্তব্য করেন। ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এবং সরকারের নীলনকশা’ শিরোনামে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম’ নামের একটি সংগঠন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজকে একটি পত্রিকায় দেখলাম,  বাংলাদেশে ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড। সেখানে কী ঘটেছে? ৯৬৩ কেজি সোনা ব্যাংকের ভল্টে জমা রাখা ছিল। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, সোনার চাকতি হয়ে গেছে মিশ্র ধাতু। ২২ ক্যারেটের সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট। গত ২৫ জানুয়ারি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুল্ক গোয়েন্দা ও এনবিআর বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার নিশ্চুপ। এই বাংলাদেশে রিজার্ভ লুট হয়েছে, এই টাকার কিছু অন্য দেশে গেছে। সেই দেশ তাদের বিচার করেছে। এ দেশে এ নিয়ে যে তদন্ত করা হয়েছে, তার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি।’

সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, রিজার্ভের সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তা ও সরকারের ওপরের মহলের লোকজন জড়িত নন, এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই বলেছে, এ রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজন জড়িত। এ জন্য এখানে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি, বিচার হয়নি। এই স্বাধীন দেশে মানুষের যেমন নিরাপত্তা নেই, তেমনি ব্যাংকগুলোতেও কোনো নিরাপত্তা নেই। এগুলো ন্যক্কারজনক।

সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। রিজার্ভ চুরির মতো ভল্টের কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়া হলে একদিন জনগণের কাছে সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে।’

এ সময় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মোশাররফ বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রশাসন দিয়ে মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে। সেই ভোট ডাকাতিতে সহযোগিতা করছে নির্বাচন কমিশন। কাজেই ভবিষ্যতে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে—এটা বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। অতএব এই কমিশনের অধীনে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো বিরোধী দলকে বাইরে রেখে জনগণের ভোট ছাড়া পাতানো খেলা খেলে গায়ের জোরে ‘স্বৈরাচার’ সরকার গঠনের ষড়যন্ত্র করছে।

জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভবিষ্যতে জনগণ যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, এমন নির্বাচন আদায় করে নিতে হবে। দেশ ‘স্বৈরাচারমুক্ত’ না হলে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কোনো ‘স্বৈরাচার’ ইচ্ছে করে ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে এই ‘স্বৈরাচার’ সরকারের পতন ঘটিয়েই জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।

কোটা সংস্কার বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করেছেন। সংসদে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন কোনো কোটাই থাকবে না। সরকার কতটা ভিতু? ছাত্রদের ন্যায্য দাবিকে দাবিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সংসদে ‘প্রতারণা’ করলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, শুধু মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের কোটা থাকতে পারে।’

আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে সংগঠনের সভাপতি সাইদুর রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।