বৃহস্পতিবার সংহতি সমাবেশ, ২৩ জুলাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

টিএসসির শিক্ষক লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ। ঢাকা, ১৭ জুলাই। সাইফুল ইসলাম
টিএসসির শিক্ষক লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ। ঢাকা, ১৭ জুলাই। সাইফুল ইসলাম

চলমান কোটা আন্দোলনের মধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে দুদিনের কর্মসূচি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকেরা। তাঁদের ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে আছে আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশ এবং ২৩ জুলাই কলাভবনের সামনের বটতলায় নিপীড়নবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) শিক্ষক লাউঞ্জে এই সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কাছে শিক্ষক লাঞ্ছনার পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য অবিলম্বে চিঠি পাঠানো, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা রক্ষা, অ্যাকাডেমিক মান সমুন্নত রাখা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের কাছে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের উদ্যোগে শিগগিরই স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরাই শুধু নয়, তাঁরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সংবাদ সম্মেলনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

সামিনা লুৎফা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন শিক্ষার্থীরা নিজেদের ইচ্ছামতোই করেছে। কিন্তু যখন তারা ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হলো, তখন শিক্ষক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তাদের পাশে দাঁড়ানো। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর যখন হামলা হয়েছে, তখন আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আমরাও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি। আমাদের বিভিন্ন দোষ দেওয়া হয়েছে,গালাগাল দেওয়া হয়েছে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরাই শুধু নয়, আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক বলেন, শহীদ মিনারে সমাবেশের পরে হামলার বিষয়ে আমরা যখন প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করি, তখন আমাদের বলা হলো আমরা কেন সমাবেশ করার আগে অনুমতি নিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩’র অধ্যাদেশের কোথাও ক্যাম্পাসে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি নিতে হবে, এমনটা বলা আছে বলে মনে হয় না। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরা সমাবেশ শুরু করার আগে আরও একটি পক্ষ সেখানে সমাবেশ করে। তাদের সমাবেশ করার জন্য কোন অনুমতি ছিল বলে মনে হয় না।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের পূর্বে আমরা প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি। হামলা ও লাঞ্ছনার পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনে শিক্ষকদের কোন ইন্ধন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা স্বাধীন। তাই যার ইচ্ছা হবে সে ক্লাস করবে,যার ইচ্ছা হবে না, সে করবে না। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। তাদের ক্লাস বর্জনে আমরা কোন সমর্থন বা ইন্ধন দিচ্ছি না।

সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ছাত্রলীগ কর্তৃক লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আমাদের খোঁজ নেন নি। উল্টো প্রক্টর আমাদের বিভিন্ন দোষ দিচ্ছেন। যারা আমাদের ওপর হামলা করেছে, তারা ছাত্রলীগের গুন্ডা বাহিনী। তারা কোথায় পড়াশোনা করেছে,তা জানি না। তাদের ভাষা খুবই খারাপ। ছাত্রলীগ তাদের ঐতিহ্য জানে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে ছাত্রলীগ এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যদি এখনই কিছু করা না যায়,তবে ছাত্রলীগের এমন গুন্ডামি থামানো যাবে না। ছাত্রলীগের কমিটি নেই বলে যারা ছাত্রলীগের ওপর হামলার দায় দিতে চান না তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না।