ইংরেজি বাংলার হেরফেরে ৪০ শতাংশ হয়েছে ৮০

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রবিউল হাসান। ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রবিউল হাসান। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সোনার পরিমাণে কোনো হেরফের হয়নি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সোনার পরিমাপের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করা হয়।

আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এস এম রবিউল হাসান।

‘ছিল সোনার চাকতি হয়ে গেল অন্য ধাতু’—এ তথ্য সঠিক নয় দাবি করে রবিউল হাসান বলেন, ‘যিনি সোনার চাকতিটি ব্যাংকে জমা রেখেছিলেন, তিনি নিজে এসে সেটা পরীক্ষা করে লিখিত প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন যে চাকতিটি যেভাবে জমা রাখা হয়েছিল সেভাবেই আছে।’ এ ছাড়া এ চাকতির সোনার বিষয়ে করণিক ভুল (ক্ল্যারিকেল মিসটেক) হয়েছে। ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার (মহাব্যবস্থাপক) আওলাদ হোসেন চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের দেওয়া সোনা জমা রাখার সময় সোনা ৪০ শতাংশই ছিল। কিন্তু ইংরেজি–বাংলার হেরফেরে সেটা ৮০ শতাংশ লিখে ভুলবশত নথিভুক্ত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকার এই ভুলটি করেছিলেন।

‘২২ ক্যারেট সোনা হয়ে গেল ১৮ ক্যারেট’—এমন তথ্যও সঠিক নয় বলে দাবি করেন নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকারের মাধ্যমে সোনার মান যাচাই করা হয়। তারা কস্টিপাথরে সোনার মান যাচাই করে। অন্যদিকে শুল্ক গোয়েন্দা সোনা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে মেশিনের ব্যবহার করেছে। বাইরে থেকে ভাড়া করা মেশিনের মাধ্যমে তারা সোনার মান যাচাই করেছে। তাই সোনার মানের হেরফের হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। ২২ ক্যারেটের জায়গায় ১৮ ক্যারেট হওয়ার বিষয়টি দুটি ভিন্ন যন্ত্রে পরিমাপের কারণেই হয়েছে।

তাহলে কি শুল্ক গোয়েন্দার ওই প্রতিবেদন ভুল? বাংলাদেশ ব্যাংক কি সেটা প্রত্যাখ্যান করছে?—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার (মহাব্যবস্থাপক) আওলাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ভুল হতে পারে। কারণ বাইরে থেকে ভাড়া করা মেশিন এনে তার মাধ্যমে তৈরি করা প্রতিবেদন মানার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে অনুসন্ধান করে আমাদের আট সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ওই সব অনিয়ম পেয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও উপস্থিতিতে ওই অনুসন্ধান হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেদনে অনিয়মের তথ্য উপস্থাপনের পাশাপাশি কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি অনুসন্ধান করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। আর তাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অসংগতি ধরা পড়লে আমাদের জানালে আমরাও কাজ করতে পারি।’

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হাসান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ছয় স্তরের কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে ঢুকতে গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরকেও অনুমতি নিতে হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ কোনোভাবে এখানে প্রবেশ করতে পারে না। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে সেখানে ঢুকে কেউ সোনা অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারেন না।
অারও পড়ুন :-