শ্বেতলেজি নীল দোয়েল

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে শ্বেতলেজি নীল দোয়েল।  ছবি: লেখক
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে শ্বেতলেজি নীল দোয়েল। ছবি: লেখক

এ বছর ৬ মার্চের ঘটনা। বিকেল পাঁচটার দিকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ‘পুণ্যি পুকুরে’ একটি গাঢ় বাদামি পাখি নামল। পাখিটির লেজের পালকে দুটি চওড়া সাদা দাগ। কিছুক্ষণ পর নীল কপাল ও কালচে নীল দেহের আরেকটি পাখি এল, যার লেজের পালকেও একই রকম দুটি দাগ। বুঝতে বাকি রইল না যে ওরা একই প্রজাতির স্ত্রী ও পুরুষ পাখি। সেদিন পুকুরে ওরা প্রায় আধঘণ্টা ছিল; গোসল করল। ওদের ছবি তুলতে কোনো সমস্যা হলো না।

বিরল এই পাখি জোড়ার নাম শ্বেতলেজি নীল দোয়েল। ইংরেজি নাম হোয়াইট টেইলড রবিন বা হোয়াইট টেইলড ব্লু রবিন।

শ্বেতলেজি নীল দোয়েলের দৈর্ঘ্য ১৭-১৯ সেন্টিমিটার। ওজন ২৪-৩০ গ্রাম। লেজের দুটি সাদা দাগ বাদে স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে পুরোপুরি আলাদা। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের লেজের সাদা দাগ দুটি ছাড়া পুরো দেহ কালচে নীল। তবে কপাল ও ভ্রুরেখা হালকা নীল; দেখলে মনে হবে যেন তা থেকে দ্যুতি ছড়াচ্ছে। স্ত্রীর দেহের ওপরটা জলপাই বাদামি ও নিচটা লালচে বাদামি থেকে ধূসরাভ বাদামি। দুটি চওড়া সাদা দাগসহ লেজ কালো। কান-ঢাকনিতে লম্বা সাদা ডোরা। গলার নিচে পীতাভ রেখা। চোখ স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে বাদামি। ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখ কুচকুচে কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি অনেকটা স্ত্রী পাখির মতো, তবে দেহ কালচে বাদামি ও তাতে থাকে কমলা-কালো তিল।

শ্বেতলেজি নীল দোয়েল এ দেশের না পরিযায়ী পাখি, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন, তাইওয়ান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরও কিছু দেশে এই পাখি দেখা যায়। আর্দ্র চিরসবুজ বনের গাছপালার নিচে গজানো লতাগুল্ম, বাঁশঝাড় ও জলপ্রবাহের পাশে বাস করে। বিরক্ত হলে উড়ে গিয়ে গাছে বসে। মূলত সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বনে এদের দেখা যায়। কদাচ খুলনা বিভাগের সুন্দরবন ও ঢাকা বিভাগে দেখা গেছে। এরা দিবাচর ও সান্ধ্যচারী। সচরাচর একাকী বা জোড়ায় থাকে। ভূমিতে ঘনভাবে জন্মানো উদ্ভিদে খাবার খোঁজে। মূলত কীটপতঙ্গ খায়। রসাল ফলও খেতে পারে। মধুর স্বরে নিচু কণ্ঠে ‘টুক-টুক-টুক’ শব্দে ডাকে ও চিকন গলায় শিস দেয়।

এদের প্রজননসম্পর্কিত তথ্য কম। তবে এপ্রিল-আগস্ট প্রজননকাল। স্ত্রী ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিমের রঙ বেগুনি। আয়ুষ্কাল ৩-৪ বছর। দিনে দিনে এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।