বিশ্বকাপ শেষ হলেও ফ্রান্সের জার্সি পরে আছেন লোকমান

বিশ্বকাপ ফুটবলে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে মিষ্টি খাইয়েছেন লোকমান। গত সোমবার শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ সড়ক এলাকায়। প্রথম আলো
বিশ্বকাপ ফুটবলে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে মিষ্টি খাইয়েছেন লোকমান। গত সোমবার শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ সড়ক এলাকায়। প্রথম আলো

বিশ্বকাপ ফুটবলের শুরু থেকেই বিভিন্ন দলের সমর্থকেরা পতাকা উড়িয়ে ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে নিজ নিজ দলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। কেউ নিজের বাড়ি রং করেছেন পতাকার রঙে। কেউ লাগিয়েছেন বিশাল আকৃতির পতাকা। ভিনদেশের লোকের এমন সমর্থনে অভিভূত বাংলাদেশে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত গত ২২ জুন ছুটে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ব্রাজিল দলের এক সমর্থকের বাড়িতে।

বিশ্বকাপ ফুটবলে ফ্রান্স দলের এমনই এক সমর্থক মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার লোকমান হোসেন (৩০)। এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের শুরু থেকেই ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হবে বলে প্রচার চালাচ্ছিলেন দলটির ঘোর সমর্থক লোকমান। লক্ষাধিক টাকা খরচ করে শ্রীমঙ্গল উপজেলাসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড, ফেস্টুন লাগিয়েছিলেন তিনি। যেখানে লেখা ছিল ‘এবার বিশ্বকাপ যাবে ফ্রান্সের ঘরে’। নিজের প্রত্যাশা থেকেই এই ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ প্রচার করেছেন তিনি।

উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের মন্দিরগাঁও এলাকার প্রয়াত দরছ মিয়ার ছেলে লোকমান এক কন্যাসন্তানের বাবা।
|
শুধু ভবিষ্যদ্বাণী করে, বিলবোর্ড-ফেস্টুন লাগিয়েই বসে থাকেননি লোকমান, ফ্রান্সের সমর্থনে সিন্দুরখান ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় মাইক লাগিয়ে সমাবেশও করেছেন। সবার কাছে ফ্রান্সের জন্য দোয়া চেয়েছেন। ফ্রান্সের জয় কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল আয়োজন, শিরনি বিতরণসহ নানা আয়োজন করেছেন। বাড়ির পাশে বড় পর্দায় ফ্রান্সের খেলাগুলো দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন।

১৫ জুলাই রাতে ফাইনাল খেলায় ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকমানকে নিয়ে এলাকাবাসী আনন্দ মিছিল বের করেন। ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত পরিচিত-অপরিচিত যাকে পেয়েছেন, মুখে মিষ্টি তুলে দিয়েছেন।

লোকমানের প্রতিবেশী মুসতাকিন আহমেদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি ফুটবলের প্রতি লোকমানের বিশেষ ঝোঁক। আর প্রতিবারই বিশ্বকাপ ফুটবলে ফ্রান্সের সমর্থক হিসেবে সে আলাদা কিছু করবেই। এলাকাবাসীর জন্য বড় পর্দায় ফুটবল খেলা দেখার আয়োজন করে সে। বড় বড় ফেস্টুন-ব্যানার লাগিয়ে সিন্দুরখান বাজারে সাউন্ড বক্স লাগিয়ে ফ্রান্সের জন্য সবার কাছে দোয়া চায়। ফাইনালে ফ্রান্স জয়ী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলা দেখতে আসা সবাই তাকে নিয়ে মিছিল বের করে। সে উপস্থিত সবাইকে মিষ্টি খাওয়ায়।’

সিন্দুরখান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লোকমান অতন্ত সহজ-সরল মানুষ। তাঁর পারিবারিক সম্পত্তি অনেক থাকলেও সে নিজে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার শুরু থেকেই ফ্রান্সের সমর্থক হিসেবে সে এলাকায় ব্যানার-পোস্টার লাগিয়েছে, ফ্রান্সের পক্ষে সমাবেশ করেছে। আমরাও তার আয়োজিত সমাবেশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। শুধু এলাকায়ই নয় শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশে বড় বড় বিলবোর্ড লাগিয়েছে। নিজেই গাছে উঠে কিংবা ভবনের ছাদে উঠে ফ্যাস্টুন লাগিয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হওয়ার পর থেকে এখনো তার গায়ে ফ্রান্সের জার্সি আছে।’

লোকমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই ফ্রান্স দলের ফুটবল খেলার প্রতি অন্য রকম ভালোবাসা ছিল। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি ফ্রান্সের জার্সি পরে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, দল চ্যাম্পিয়ন না হওয়া পর্যন্ত জার্সি খুলবেন না। তবে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এখনো জার্সি খোলেননি। জার্সি পরেই ১৭ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে টাকা জমানো শুরু করেন তিনি। এই জমানো টাকা দিয়েই এবার তিনি ব্যানার, পোস্টার, ফ্যাস্টুন বানিয়েছেন। লোকমান আরও বলেন, তিনি কখনো ফ্রান্স যেতে চান না। তবে চান প্রতিটি বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ভালো খেলা উপভোগ করতে।