বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনা ঠিক আছে

গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. আবদুল মান্নান (ডানে) এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান।  ছবি: সংগৃহীত
গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. আবদুল মান্নান (ডানে) এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
>
  • বুধবার সচিবালয়ে বিশেষ বৈঠক 
  • প্রতিমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন
  • বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর একসঙ্গে কাজ করছে
  • রাজনৈতিক মহলেও আলোচনা

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সব সোনা ঠিকঠাক আছে। তিনি বলেন, তাঁর কথা বিশ্বাস না হলে যে কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে তা দেখে আসতে পারেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের দরজা খোলা আছে।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল মান্নান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর একসঙ্গে কাজ করছে। কাজ করলে কিছু ধারণাগত বা জ্ঞানগত ফারাক সৃষ্টি হতে পারে। এটা নতুন নয়। সব সোনা ঠিক আছে, ঘরেই (বাংলাদেশ ব্যাংকে) আছে। এ সম্পর্কে পরিষ্কার হয়ে গেছি। আমরা আরও বসব, যে পরিমাণের কথা বলা হয়েছে, ৯৬৩ কেজি নাকি, তা মোটেই ঠিক নয়।’

১৭ জুলাই প্রথম আলোয় প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড শীর্ষক প্রতিবেদন বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী গতকাল বুধবার সচিবালয়ে এসব কথা বলেন। এর আগে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য কালীপদ হালদার, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সহিদুল ইসলাম, শুল্ক মূল্যায়ন ও নিরীক্ষা কার্যালয়ের কমিশনার মইনুল খানকে নিয়ে বৈঠক করেন। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর চলে যান। প্রসঙ্গত, আগের দিন মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকও একই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভল্টের সোনার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে।

রাজনৈতিক মহলেও আলোচনা
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সোনা নিয়ে গতকাল সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের গতকাল বুধবার গাজীপুরের টঙ্গীতে সড়ক ও জনপথের উপবিভাগীয় কার্যালয়ে এক সভায় বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে স্বর্ণ গায়েবের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিরোধী দল যেকোনো ইস্যু পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে। একটা কিছু পেলে তার সত্যতা যাচাই না করেই তা নিয়ে মন্তব্য করছে।

আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল এক মানববন্ধনে বলেছেন, দেশে দুর্নীতি আজ কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে! বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সোনা রাখার পর সেটা বদলে মিশ্র ধাতুজাতীয় জিনিস রাখা হয়েছে। অলংকারগুলো বদলে সেখানে রাখা হয়েছে নকল জিনিস। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা লুট করা হয়েছে, যার প্রতিবেদনটিও এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন
গত সোমবার সকালে খবরের কাগজ পড়ে এ বিষয়ে প্রথম জেনেছেন উল্লেখ করে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান বলেন, ‘স্বীকার করব যে প্রতিবেদনটি পড়ে আমি আঁতকে উঠেছি। পত্রিকায় যেভাবে এসেছে, আমার কাছে ভয়ংকর মনে হয়েছে। যেহেতু আমার জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী (অর্থমন্ত্রী) দেশে নেই, তাই যতটুকু সম্ভব, নিজের পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় কথাবার্তা বলেছি এবং তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করেছি।’

প্রতিমন্ত্রী মান্নান বলেন, প্রকৃত ঘটনা জনগণকে জানানোর জন্যই সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেন তিনি। আর সোমবার সকালে যে ভীতি ছিল তাঁর, সংবাদ সম্মেলনের পর সন্ধ্যায় তা কমে গেছে। এ ছাড়া এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি আশ্বস্ত হয়েছেন যে ভয়ের কোনো ব্যাপার নেই। প্রতিবেদনটি বরং অনেক বড় মাত্রায় এসেছে, এ দেশের জন্য যাকে বলে দুনিয়াকাঁপানো মাত্রা।

প্রতিবেদন প্রকাশের দিন সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে করণিক ভুলের কথা জানিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছিলেন, প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নানও প্রায় একই কথা বলেন গতকাল। তিনি বলেন, ৪০ আর ৮০-এর একটা ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল। লেখার মধ্যে ইংরেজি-বাংলা মিশে গেছে। তা ছাড়া আগে সোনা মাপা হতো মান্ধাতার আমলের নিক্তি দিয়ে বা কষ্টিপাথরে ঘষে। এখন আধুনিক পরিমাপক দিয়ে মাপা হয়। এর মধ্যে চুল পরিমাণ বেশ-কম আসতে পারে।

জনগণের সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সামান্যতম গাফিলতি থাকলেও সে দায় সরকারের বলে উল্লেখ করেন আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, বিষয়টিকে ছোট করে দেখা হচ্ছে না। সামান্য ফাঁকফোকর দিয়েও বড় ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই প্রয়োজনে সরকারের অন্য কোনো সংস্থাকে দিয়েও তা পর্যালোচনা করা হবে।

বিষয়টি হঠাৎ কিছু হয়নি, বরং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এক বছর ধরে কাজ করেছে, প্রশ্নোত্তর পর্বে এ নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে বলেন, এটা ঠিক, আমলাতান্ত্রিক কিছু গাফিলতি আছে। লিখিত চিঠির জবাব দিতে দেড় মাসও লেগেছে। পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে, গাফিলতিরও শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে কি না, জানতে চাইলে আবদুল মান্নান বলেন, অর্থমন্ত্রী দেশে ফেরার পর তাঁকে সব জানানো হবে। তদন্ত কমিটি, না পর্যালোচনা কমিটি, না অন্য কী হবে, ভাষাটা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন কী করা যায়।

ভল্টের সোনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী অবগত কি না, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে।’