ধরে রাখা আর পুনরুদ্ধারের লড়াই

নওগাঁ-৬ আসনে টানা তিনবারের সাংসদ আলমগীর কবির হঠাৎ বিএনপি ছাড়ায় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বড় ধাক্কা খায় দলটি। ওই নির্বাচনে আসনটিতে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইসরাফিল আলম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বার সাংসদ হন। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দুই দলই নিজেদের অবস্থান ভালো বলে দাবি করছে।

আওয়ামী লীগ বলছে, উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে তাদের অবস্থান আগের চেয়েও ভালো। আসনটি তাদেরই থাকবে। আর বিএনপির দাবি, দল এখন সুসংগঠিত। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আসনটি তারা পুনরুদ্ধার করতে পারবে। নির্বাচন সামনে রেখে দুই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাই মাঠে নামছেন।

আত্রাই-রানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসন। স্থানীয় লোকজন বলেন, এখানে একসময় চরমপন্থী সংগঠন সর্বহারা এবং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির অবাধ বিচরণ ছিল। সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জেএমবির নৃশংসতা, তাণ্ডব মানুষ এখনো ভোলেনি। বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তা এখনো ভাবায় মানুষকে। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন হলেও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও শিক্ষায় এলাকাটি তুলনামূলক পিছিয়ে। আগামী নির্বাচনে এসব বিষয় প্রভাব রাখবে।

১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন তৎকালীন বিএনপির প্রার্থী আলমগীর কবির। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরে তিনি হঠাৎ দল ছেড়ে এলডিপিতে যোগ দিলে বিএনপি বিপাকে পড়ে। সে সময় দলের হাল ধরেন আলমগীরের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে তিনিই বিএনপির প্রার্থী হন। পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইসরাফিল আলমের কাছে। নৌকা প্রতীক পেয়েছিল ১ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৫ ভোট। ধানের শীষ পায় ৮৭ হাজার ৩১৯ ভোট। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ইসরাফিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

আসন্ন নির্বাচনেও ইসরাফিল আলম আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলের মনোনয়ন পেতে আরও চারজন তদবির ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তবে দলে ও এলাকায় ইসরাফিলের অবস্থান বেশ ভালো। অনেকে মনে করেন, তিনি গত ৯ বছরে এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নে ভালো অবদান রেখেছেন। পতিসরের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি জাতীয়ভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন। এলাকা থেকে সর্বহারা ও জেএমবি নির্মূলকে ইসরাফিলের সাফল্য হিসেবেই দেখেন অনেকে। তবে দলের একাংশের অভিযোগ, তিনি ত্যাগী ও প্রবীণদের মূল্যায়ন না করে নির্দিষ্ট কিছু নেতা-কর্মী পরিবেষ্টিত থাকেন।

রানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দীন বলেন, দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো হলেও কিছু নেতা-কর্মীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে। তিনি বলেন, ‘আমি ২০০৫ সাল থেকে সাধারণ সম্পাদক। কোনো দিন চাঁদাবাজি, দখলবাজি করিনি। সম্প্রতি দলে আবির্ভাব ঘটা কিছু নতুন মুখ নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।’ তিনি বলেন, নেত্রী যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর জন্যই কাজ করবেন।

>

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর)
মোট ভোটার
৩ লাখ ৯ হাজার ৩৯৭ জন
২০০৮ সালের নির্বাচন
বিজয়ী প্রার্থী: ইসরাফিল আলম (আ.লীগ)
প্রাপ্ত ভোট: ১,৩০,৬৬৫
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী: আনোয়ার হোসেন (বিএনপি)
প্রাপ্ত ভোট: ৮৭,৩১৯

ইসরাফিল আলম বলেন, তিনি এলাকা থেকে সন্ত্রাস দূর করেছেন, যোগাযোগব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছেন। আগে রাজনীতিবিদেরা সন্ত্রাসীদের লালন-পালন ও ব্যবহার করতেন। তিনি তাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেননি। ভালোবাসা দিয়েছেন, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। যার কারণে এরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবকিছু মূল্যায়ন করে দল অবশ্যই আমাকে মনোনয়ন দেবে। গণতান্ত্রিক দলে যে কেউ আবেদন করতে পারে।’

মনোনয়নপ্রত্যাশী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলীও এলাকায় জনসংযোগ এবং দলীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করছেন। তবে তিনি বসবাস করেন রাজশাহী শহরে। নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী ওমর ফারুকও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি সাবেক সাংসদ ওহিদুর রহমানের ছেলে। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহীন মনোয়ারা হক এবং রানীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনও মনোনয়ন পাওয়ার আশায় দৌড়ঝাঁপ করছেন।

এদিকে দুঃসময়ে হাল ধরায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন বলে দলীয় নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া জেলা তাঁতী দলের সভাপতি এছাহক আলীও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

আনোয়ার হোসেন বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে তিনি শতভাগ আশাবাদী। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ আসনে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়ী হবে।

রানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম আল ফারুক বলেন, বর্তমানে উপজেলায় দলীয়ভাবে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন অনেক শক্তিশালী। তবে দমননীতির কারণে সুষ্ঠুভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন না। গত নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন পরাজিত হলেও দীর্ঘ সময় দলের হাল ধরে রাখায় আগামী নির্বাচনেও তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে বিশ্বাস। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ আসনে বিএনপিই জিতবে।

বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী এছাহক আলী থাকেন ঢাকায়। মাঝেমধ্যে এলাকায় দেখা গেলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তেমন সরব নন।