অস্ত্রোপচারের সুযোগ না দিয়ে চলে গেলেন রাজীব মীর

স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে রাজীব মীর। ছবিটি মেয়ের প্রথম জন্মবার্ষিকীতে তোলা। ছবি: রাজীব মীরের ফেসবুক থেকে নেওয়া
স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে রাজীব মীর। ছবিটি মেয়ের প্রথম জন্মবার্ষিকীতে তোলা। ছবি: রাজীব মীরের ফেসবুক থেকে নেওয়া

গত ৩০ মার্চ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি লিখেছিলেন, ‘ঝড়ে পড়েছি, ঝরে পড়িনি।’ তবে শেষ পর্যন্ত পরিবার, স্বজন ও বন্ধুদের ভালোবাসার হাত সরিয়ে দিয়ে ঝরেই গেলেন চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, লেখক রাজীব মীর (৪১)।

পেছনে রেখে গেলেন ‘...গাছ, পাখি, ফুল, নদী, আকাশ, বাতাস আর মানুষের ভালোবাসা পেয়ে’ বড় হওয়ার প্রার্থনায় ১৫ মাস বয়সী মেয়ে বিভোরকে। গত ২৮ মার্চ মেয়ে বিভোরকে প্রথম জন্মবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এই বাক্য লিখেছিলেন রাজীব মীর।

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ৩৭ মিনিটে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাইয়ে গ্লিনিগলস গ্লোবাল হেলথ সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাজীব মীর।

তাঁর ছোট বোন সৈয়দা ফারজানা ইয়াসমীন আজ শনিবার সকালে প্রথম আলোকে জানান, হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন রাজীব মীর। গতকাল রাত ১টা ৩৭ মিনিটে তাঁর ভাই মারা যান। তিনি জানান, চেন্নাইয়ে এখন রাজীবের বাবা-মা, সবচেয়ে ছোট বোন ও বোনের স্বামী রয়েছেন। তিনিও রাজীবের সঙ্গে চেন্নাইয়ে ছিলেন। কিছুদিন আগে দেশে ফিরে আসেন। রাজীবের স্ত্রী সুমনা খান ও মেয়ে বিভোর ঢাকায় আছেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে রাজীব ছিলেন সবার বড়।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাজীব মীরের জন্ডিস ছিল এক থেকে দেড় মাসের মতো। ই-ভাইরাস ধরা পড়লে শুরুতে এটাকে তেমন ক্ষতিকর কিছু না বলে ভাবা হয়েছিল। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য চেন্নাই নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁর লিভার সিরোসিস হয়েছে জানিয়ে দ্রুত লিভার প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। এর জন্য ৯০ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। এই অর্থের বেশির ভাগ রাজীব মীরের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় পাওয়া যায়।

গত মাসে টেলিফোনে চেন্নাইয়ে রাজীব মীরের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। ওই সময় শারীরিক দুর্বলতার পরেও মনের জোরে বলেছিলেন, ‘আমি খবর পেয়েছি, আমার চিকিৎসার সহায়তায় আমার পরিবার, বন্ধু, স্বজন, এমনকি অপরিচিত মানুষজনও এগিয়ে এসেছেন। আমি আমার মেয়ের কাছে ফিরতে চাই। সবার দোয়া ও সহযোগিতা থাকলে ভালো হয়ে দেশে ফিরতে চাই।’

রাজীবের বোন সৈয়দা ফারজানা ইয়াসমীন কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজ জানান, লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয় অর্থ রাজীব নিজেই হাসপাতালে জমা দেন। তাঁর অস্ত্রোপচারের জন্য গত শনিবার সময় নির্ধারণ করা হয়। ওই সময় কিছুটা মুষড়ে পড়েছিলেন রাজীব। তিনি অস্ত্রোপচারের সময় এগিয়ে আনার আকুলতা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আমি কি অত দিন বাঁচব?’ শেষ পর্যন্ত তাই-ই হলো। রাজীবের ডোনারসহ সবকিছুই প্রস্তুত ছিল। অস্ত্রোপচারের সুযোগ পাওয়া গেল না।

ফারজানা জানান, গত শনিবারের আগে হার্ট অ্যাটাক হয় রাজীবের। এরপর থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

রাজীবের মরদেহ দেশে আনার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে পারিবারিক সূত্রে।