বিএনপির হঠাৎ ঐক্যে কিছুটা চাপে আ.লীগ

নির্বাচন থেকে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর হঠাৎ সরে যাওয়া সিলেটে আওয়ামী লীগের জন্য ভোটের হিসাব কিছুটা হলেও জটিল করে তুলেছে। দলটির নেতারাই বলছেন, এক সপ্তাহ প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এভাবে হুট করে পিছটান দেবেন, এটি তাঁরা ভাবতে পারেননি। বিবাদ মিটে যাওয়ায় বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ বেড়ে গেছে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও এটি প্রভাব ফেলবে। আর আওয়ামী লীগের জন্য এ ঘটনা একধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করেছে।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর সমর্থনে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বদরুজ্জামান সেলিম। তিনি সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন ছয়জন। দলের মধ্যে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ। কামরান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, আর আসাদ সাধারণ সম্পাদক। শুরুতে মনোনয়ন নিয়ে আসাদের সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ-দুঃখ থাকলেও এখন তা নেই। আসাদ এখন নিয়মিত গণসংযোগ করছেন দলের প্রার্থী কামরানের পক্ষে।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে মনে করছেন, নির্বাচনী মাঠ থেকে বদরুজ্জামান সেলিমের চলে যাওয়ায় ভোটের হিসাব নিয়ে এখন তাঁদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। কিছু সময়ের জন্য হলেও পরিস্থিতি জটিল হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌকাকে বিজয়ী করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। ঐক্যবদ্ধ থাকায় সিলেটে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর অবস্থান অন্য সবার চেয়ে অনেক অনেক ওপরে রয়েছে।’

এদিকে বিএনপির অভিযোগ, বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর রাতেই পুলিশ বিএনপি ও ছাত্রদলের ১৫ জন নেতার বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। এর মাধ্যমে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক ধরোনোর চেষ্টা চলছে।

হয়তো মেয়র পদে শেষ নির্বাচন

আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেছেন, তিনি কারাগারে থাকার সময় সিলেটের মানুষ তাঁকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছিলেন। সিলেট শহরে মেয়র পদে এটিই হয়তো তাঁর শেষ নির্বাচন। জীবন দিয়ে হলেও তিনি সিলেটের ঋণ শোধ করার চেষ্টা করবেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে নগরীর দক্ষিণ সুরমা এলাকায় গণসংযোগে এসব কথা বলেন কামরান।

এর আগে বৃহত্তর বাগবাড়ির নরসিংটিলায় মহানগর রবিদাস সমাজকল্যাণ সংস্থার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন কামরান। সেখানে তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট চান। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি মতি লাল রবিদাস।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জুমার নামাজ পড়েন দক্ষিণ সুরমার মুছারগাঁও বারখলা কায়েস্তরাইল ওয়াকফ এস্টেট জামে মসজিদে। নামাজ শেষে মসজিদের ইমাম ও এলাকার মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। এ সময় ২৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁকে প্রতীকী নৌকা উপহার দেওয়া হয়।

গণসংযোগের সময় বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে ছিলেন ২৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আমীর উদ্দিন, কায়েস্তরাইল উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছালেক আহমদ, মুছারগাঁও সমাজকল্যাণ সমিতির সহসভাপতি শেখ হামিদুল্লাহ, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আবদুল হাফিজ নূর আলী প্রমুখ।

উন্নয়নের কথা শোভা পায় না

সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট এলাকায় গতকাল গণসংযোগ করেন এবং পথসভা করেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করেন, সিলেটে বিএনপির প্রথম ও দ্বিতীয় সারির নেতাদের বাসায় পুলিশ বিনা কারণে তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা নেতাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

আরিফুলের অভিযোগ, গত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরও তাঁকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। এখনো পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন বাহিনী তাঁকেসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে, এর বিচার চেয়েও তিনি পাচ্ছেন না।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর উদ্দেশে আরিফুল হক বলেন, ‘যিনি টানা কয়েকবার মেয়র থাকা সত্ত্বেও নগরীর উন্নয়ন করতে পারেননি, তাঁর মুখে উন্নয়নের কথা শোভা পায় না।’

বিএনপির ১৫ জন নেতার বাসায় পুলিশ

বিএনপি অভিযোগ করেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ও ছাত্রদলের অন্তত ১৫ জন নেতার বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি মাহবুবুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি সাঈদ আহমদ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক লিটন কুমার দাস, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলাউর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক উজ্জ্বল রঞ্জন চন্দ উল্লেখযোগ্য।

সাঈদ আহমদ প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, শাহপরান থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁর উপশহরের বাসায় যান। তাঁকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করেন পুলিশ সদস্যরা।

বিভিন্ন বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালানোর কথা স্বীকার করেন শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মামলার আসামি ধরতে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে যাচ্ছে। সাঈদ আহমদ যে বাসায় থাকেন, সেখানে অনেক বাসিন্দা থাকেন। সেখানে একজন আসামিকে আমরা খুঁজছিলাম।’

পুলিশের এ অভিযান সম্পর্কে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, তল্লাশির নামে পুলিশ বাসায় গিয়ে নেতাদের নির্বাচন পর্যন্ত সিলেট শহর থেকে চলে যেতে বলছে। না হয় সমস্যা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন মানাউবী সিংহ, সিলেট)