অবশেষে জামায়াতকে পাশে পেল বিএনপি

সিটি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা ১০ জুলাই থেকে শুরু হলে বরিশালে জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পাশে ছিলেন না। এ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। এ নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি ছিল। শেষ পর্যন্ত সব গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন জামায়াতের নেতারা।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রাইনকম্পাউন্ড এলাকায় বিএনপির একটি পথসভায় অংশ নেন বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমির মুয়াযযম হোসাইন এবং সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দীন মো. বাবর। অবশ্য সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বেশ আগেই বরিশালে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছিল জামায়াত। দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা, ঘরোয়া ও সামাজিক বৈঠক এমনকি পোস্টারও লাগানো হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত জামায়াতের প্রার্থী মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। এরপরও জামায়াত নিয়ে বরিশাল বিএনপিতে অস্বস্তি ছিল।

বরিশালে জামায়াতের মেয়র প্রার্থী ছিলেন মুয়াযযম হোসাইন। রমজানের ঈদের সময় নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর পোস্টারও লাগানো হয়েছিল। মজিবর রহমান সরোয়ারকে বিএনপি মেয়র প্রার্থী ঘোষণার পর স্থানীয়ভাবে দুই দলের নেতাদের মধ্যে সমঝোতা হয়। তখন বিএনপির কাছে চারটি ওয়ার্ডে (১৪, ২৩, ২৪ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড) কাউন্সিলর পদে ছাড় চেয়েছিল দলটি। এ নিয়ে এখনো দুই দলের নেতাদের মধ্যে দর-কষাকষি চলছে। এর মধ্যে দুটি ওয়ার্ডে (১৪ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড) বিএনপির প্রার্থী নেই। বাকি দুটি ওয়ার্ডের বিএনপির প্রার্থীরাই বর্তমান কাউন্সিলর। মূলত এই দুটি ওয়ার্ড নিয়েই দুই দলের মধ্যে সমস্যা চলছে।

বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে দেরিতে প্রচারণা শুরু করার বিষয়ে বরিশাল মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেখুন, মনঃকষ্ট ছিল না এমন না। আমাদেরও তো একটা ভিন্ন রাজনীতি আছে। সেই জায়গা থেকে জোটের মধ্যে পাওয়া না-পাওয়ার কিছু বিষয় তো থাকেই। কিন্তু অভিমান করে বসে থেকে জোটের প্রার্থী ক্ষতি করে লাভ কী বরং জিতলেই লাভ। তাই এখন আর বরিশালে সেটা নেই। কাল (শনিবার) থেকে আমরা সবাই মাঠে নামব।’

বিএনপির নেতারা জানান, ৩০টি ওয়ার্ডের কোনোটিতে দল থেকে কাউন্সিলর পদে কাউকে সমর্থন দেওয়া হয়নি। জামায়াতের দাবির বিষয়ে দলে এখনো আলোচনা চলছে। তবে যে দুটি ওয়ার্ডে জামায়াত বিএনপির সমর্থন চাইছে, সেখানে বাস্তব কারণেই ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি জামায়াত নেতাদের বুঝিয়ে বলেছেন তাঁরা। জোটের দুই দলের জন্যই ওই দুটি ওয়ার্ড উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৫, ১৬ ও ১৯ নম্বর—এই তিনটি সাধার‍ণ ওয়ার্ডে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত তিন প্রার্থী কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে চলেছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত ১০টি মহিলা ওয়ার্ডের মধ্যে ১টিতে (৪ নম্বর ওয়ার্ড) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপি-সমর্থিত একজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে চলেছেন।

জামায়াতের সঙ্গে বোঝাপড়ার বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়রুল হক প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াত ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক। জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে। জামায়াত নেতারা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন। এ নিয়ে এখন আর বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।