ঢাকার দুই শ্রমিককে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়: কুলাউড়ায় নারীসহ গ্রেপ্তার ১০

দুই শ্রমিক অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে এই ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কুলাউড়া, ২২ জুলাই। ছবি: কল্যাণ প্রসূন
দুই শ্রমিক অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে এই ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কুলাউড়া, ২২ জুলাই। ছবি: কল্যাণ প্রসূন

ঢাকার আশুলিয়ার একটি কারখানার দুই শ্রমিককে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা থেকে রোববার চার নারীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মন্তাজ মিয়া ওরফে মিছির আলী (৩৫), কুদ্দুছ মিয়া (৩৮), আয়েশা খাতুন (৩০), হবিগঞ্জ সদরের কিছমত আলী (৪২), কুলাউড়া পৌর শহরের সফিকুর রহমান (৪৫), লংলা খাস এলাকার আজর মিয়া (৫৫), লিটন আহমদ (৩০), ছালেহা খাতুন (৫২), হোছনা বেগম (১৮) ও নাছিমা বেগম (২৬)।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া সফিকুর রহমানসহ দুই ব্যক্তি গত শুক্রবার দুপুরের দিকে আশুলিয়ার ‘ইন্টার কলি-২’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে যান। এ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা বহুতল ভবনে থাই গ্লাস স্থাপনের কাজ করেন। এ সময় ওই দুই ব্যক্তি কারখানার মালিককে বলেন, কুলাউড়া পৌর শহরে তাঁদের একটি বহুতল ভবন রয়েছে। তাতে গ্লাস লাগাতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের মালিক জালাল উদ্দিন গ্লাসের মাপ আনার জন্য শ্রমিক জাকির হোসেন (৩৬) ও সোলায়মান খন্দকারকে (৩৩) ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে যেতে বলেন।

এজাহারে বলা হয়, ওই দিন রাত পৌনে ১২টার দিকে ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে জাকির ও সোলায়মান বাসযোগে কুলাউড়ায় পৌঁছান। পরে ওই দুই ব্যক্তি অটোরিকশায় করে জাকির ও সোলায়মানকে প্রথমে কুলাউড়ার লংলা খাস এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে যান। সেখান থেকে রাতে ভবন দেখানোর কথা বলে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে নিয়ে তাঁদের চোখ ও হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। এ সময় তাঁদের মারধরও করা হয়। একপর্যায়ে অপহরণকারীদের নির্দেশ অনুযায়ী, শ্রমিক সোলায়মান মুঠোফোনে প্রতিষ্ঠানের মালিককে বলেন, তাঁদের অপহরণ করা হয়েছে। তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিলে তাঁদের মেরে ফেলা হবে। বিষয়টি পুলিশকে না জানাতেও বলা হয়। এতে মালিক রাজি হয়ে অপহরণকারীদের দেওয়া বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে মোট ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পাঠান।

আসামিবাহী পিকআপভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাক। ঢুলিপাড়া, কুলাউড়া, ২২ জুলাই। ছবি: কল্যাণ প্রসূন
আসামিবাহী পিকআপভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাক। ঢুলিপাড়া, কুলাউড়া, ২২ জুলাই। ছবি: কল্যাণ প্রসূন

মামলার এজাহারে বলা হয়, পরদিন শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ওই দুই ব্যক্তি সোলায়মান ও জাকিরকে অটোরিকশায় করে কুলাউড়া পৌর শহরে বাস কাউন্টারের সামনে নামিয়ে চলে যান। পরে তাঁরা কুলাউড়া থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ তাঁদের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী, রাতেই লংলা খাসসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সোলায়মান খন্দকার বাদী হয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ১০ জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিন থেকে চারজনকে আসামি করে মামলা করেন।

কুলাউড়া থানার এসআই আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা অপহরণ ও বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে মূল হোতা পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চলছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে আটটি মুঠোফোন, ৯ হাজার ৫০০ টাকা ও বিকাশে জমা হওয়া এক লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে।

আসামি বহনের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে
পুলিশ জানায়, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের একটি পিকআপভ্যানে করে মৌলভীবাজারের আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ সময় উপজেলার ঢুলিপাড়া এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা বালুবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে গাড়িটির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে পুলিশ কনস্টেবল তনয় ও নাহিদ, আসামি সফিকুর ও কিছমত, ট্রাকের চালক মহিবুর রহমান এবং পিকআপভ্যানের চালক ময়ুব আহত হন। এ সময় আশপাশের লোকজন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে পুলিশের আরেকটি দল ঘটনাস্থলে যায়।

কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, আহত ব্যক্তিদের মৌলভীবাজার সদরসহ স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।