টোল প্লাজায় ভাঙচুর-মারধর, এএসপি প্রত্যাহার
সরকারি গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। লাইনে থাকতে নারাজ তিনি। দেরি হওয়ায় পথিমধে৵ কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু টোল প্লাজায় ভাঙচুর ও কর্মচারীদের মারধর করেন। আধা কিলোমিটার দূরে উল্টো পথে যেতে বাধা দেওয়ায় লাঞ্ছিত করেন এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে। পরে চন্দনাইশ থানায় গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করেন।
অভিযোগ ওঠা এই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মশিউর রহমান। তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে কর্মরত। তাঁর এখতিয়ারে না থাকলেও এসব এলাকায় গিয়ে ভাঙচুর ও সহকর্মীদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। আজ শুক্রবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। পরে বিকেলেই মশিউরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) নুরে আলম মিনা।
এসপি প্রথম আলোকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানিয়ে সরকারি গাড়ি নিয়ে মিরসরাইয়ের এএসপি মশিউর রহমান দক্ষিণ চট্টগ্রামে কেন গিয়েছেন, তদন্ত করা হচ্ছে। টোল প্লাজায় ভাঙচুর ও এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠায় প্রাথমিকভাবে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জ অপূর্ব শাহা অভিযোগ করে বলেন, হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমে এএসপি মশিউর বুথের গ্লাস ভাঙা শুরু করেন। পরে বুথ থেকে বের করে সোহাগ ও ফয়সালকে মারধর করেন। তাঁদের বাঁচাতে গেলে সাদ্দাম হোসেন নামের আরও একজনকে মারধর করেন তিনি। পরে তিনি তাঁর গাড়ির সামনে থাকা অন্য গাড়িগুলো টোল গ্রহণ ছাড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য করেন এবং তিনিও চলে যান। এ ঘটনায় শাহ আমানত টোল প্লাজার ব্যবস্থাপক মহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে কর্ণফুলী থানায় মামলা করেছেন। মামলায় এএসপির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও তিন থেকে চারজনকে আসামি করা হয়।
আধা কিলোমিটার যাওয়ার পর কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেক গরুর বাজার এলাকায় সড়কের কাজ চলায় এক পাশ বন্ধ ছিল। এক পাশ দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের যাতায়াত রয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে এএসপির সরকারি গাড়িটি উল্টো পথে কক্সবাজারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট জলিল মিয়া ওই গাড়িসহ অন্য গাড়িও থামান। গাড়ি থেকে নেমে মশিউর থামানোর কারণ জানতে চান। পরে নিজের পরিচয় দেওয়ার পর সার্জেন্টকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু গাড়ি দাঁড় করানোয় ক্ষিপ্ত হয়ে যান। লাঠি দিয়ে আশপাশে থাকা অটোরিকশাসহ কয়েকটি গাড়িতে বাড়ি দেন। এই ঘটনায় নগর পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট জলিল মিয়া কর্ণফুলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, বেলা দুইটার দিকে চন্দনাইশ থানায় যান এএসপি মশিউর। সেখানে দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। মারধরে আহত চন্দনাইশ থানার এসআই সেলিম মিয়া ও কনস্টেবল মঙ্গলমনি চাকমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান মেডিকেল অফিসার বোরহান উদ্দিন।
বিষয়টি জানার পর পটিয়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান চন্দনাইশ থানা থেকে মশিউর রহমানকে পটিয়ায় তাঁর কার্যালয়ে বিকেলে নিয়ে আসেন। সেখানে এসেও হইচই করেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মশিউর রহমানের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।