ভারতে পাচার মেয়েটি ফিরল

ভারতে পাচার হওয়া এক কিশোরীকে (১৪) গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়েছে। গত বছরের শুরুতে মেয়েটিকে ভারতে পাচার করেছিল তারই খালু। কিশোরীর বাড়ি খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায়। তাকে ভারতে পাচারের অভিযোগে গত বছরের ১৯ মার্চ হরিণটানা থানায় মামলা করেন তার মা। ওই মামলায় বর্তমানে মেয়েটির খালু ও তার সহযোগী মো. ইসমাইল সরদার কারাগারে রয়েছেন।

মেয়েটিকে দেশে ফেরত আনতে বড় ভূমিকা পালন করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ পরিচালিত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। বৃহস্পতিবার দুপুরে উদ্ধার হওয়া কিশোরীকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তারা। সেখানে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হুমায়ুন কবির বলেন, মেয়েটিকে কাজ দেওয়ার কথা বলে ভারতে নিয়ে দালালদের কাছে বিক্রি করে দেন ইসমাইল। দালালেরা তাকে গুজরাটে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করানো হয়। প্রায় তিন মাস দালালদের কাছে আটক থাকার পর মেয়েটিকে উদ্ধার করে গুজরাটের পুলিশ। তারা মেয়েটিকে ঝুনাগড় এলাকার ‘শিশু মঙ্গল অরফানেজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করে। এক বছরের বেশি সময় চেষ্টার পর মেয়েটিকে সেখান থেকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।

মেয়েটির মা বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁর মেয়েকে খালার বাড়ি নিয়ে যান ইসমাইল। সেখান থেকে আর বাড়ি ফিরে আসেনি সে। পরে ইসমাইলের কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। কিছুদিন পর ভারত থেকে ফোন করে তার মেয়ে। তার খালু তাকে কলকাতায় নিয়ে গেছে বলে জানায় সে। এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় তিনি হরিণটানা থানায় মামলা করেন। মামলায় মেয়ের খালু ও ইসমাইলকে আসামি করা হয়।

কিশোরীর মা জানান, গত এপ্রিল মাসে গুজরাটের পুলিশ তাঁর মেয়েকে উদ্ধারের পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর মেয়েকে ফিরে পাওয়ার জন্য তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আবেদন করেন। পরে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে মেয়েটিকে দেশে ফেরত আনা হয়।

মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে দালালের কাছে সে ছিল, সেখানে তার চেয়েও বয়সে ছোট সাতজন বাংলাদেশি মেয়ে ছিল। তাদের ওপর নির্যাতন করা হতো।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপকমিশনার সোনালি সেন জানান, আর্থিকভাবে অসচ্ছল এমন মেয়েদের ভুল বুঝিয়ে ভারতে পাচার করছে একটি চক্র। গত বছর শুধু কেএমপির মধ্যেই ভারতে পাচারের অভিযোগে ৮টি মামলা হয়েছে। আর এ বছর ওই সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৯। কিন্তু বাস্তবতা এর চেয়েও ভয়াবহ।