খাগড়াছড়িতে এক দিনে জ্বলল সাত চিতা

মহালছড়ি উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমার স্ত্রী প্রভাতী চাকমা, বড় মেয়ে জুলি চাকমা, মেজ মেয়ে পলি চাকমা ও ছোট মেয়ে অর্নিশা চাকমা দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানের আগে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছবিটি আজ ১৯ আগস্ট রোববার বেলা ১১টায় খাগড়াছড়ি শহরের উত্তর খবংপুড়িয়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
মহালছড়ি উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমার স্ত্রী প্রভাতী চাকমা, বড় মেয়ে জুলি চাকমা, মেজ মেয়ে পলি চাকমা ও ছোট মেয়ে অর্নিশা চাকমা দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানের আগে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছবিটি আজ ১৯ আগস্ট রোববার বেলা ১১টায় খাগড়াছড়ি শহরের উত্তর খবংপুড়িয়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজারের পাশেই উত্তর খবংপুড়িয়া এলাকা। পাশে নদীর পাড়ে শ্মশানে জ্বলছে দুটি চিতা। শনিবার হামলায় নিহত জিতায়ন চাকমা ও কলেজছাত্র রূপম চাকমাকে চোখের জলে শেষবিদায় জানাচ্ছেন স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা।

আজ রোববার বেলা দুইটার চিত্র এটি। এর কিছুক্ষণ পর বিকেল চারটায় দক্ষিণ খবংপুড়িয়া শ্মশানে এল আরও তিন লাশ। দাহ করা হলো ইউপিডিএফের তিন নেতা তপন চাকমা, এলটন চাকমা ও পলাশ চাকমার মরদেহ। দাউ দাউ করে জ্বলেছে চিতার আগুন। সঙ্গে জ্বলেছে স্বজনদের মনের আগুন।
জিতায়ন চাকমা স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কাজ করতেন মহালছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তাঁর আয়েই চলত পরিবারটি। তিন মেয়েকে নিয়ে জিতায়নের স্ত্রী প্রভাতী চাকমা এখন অথই সাগরে। আজ রোববার দুপুরে জিতায়নের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
গতকাল শনিবার সকালে বাড়ির কাছে স্বনির্ভর বাজারে অতর্কিতে হামলায় নিহত ছয়জনের একজন জিতায়ন। এ ঘটনায় নিহত আরও দুই সাধারণ নাগরিক হলেন প্রকৌশলী ধীরাজ চাকমা ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী রূপম চাকমা। স্বনির্ভর বাজারের তিন কিলোমিটার দূরে শন কুমার চাকমা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা মারা যান ভয়ে পালানোর সময় আছাড় খেয়ে।

শহরের শ্মশানে এই পাঁচজনের মরদেহ দাহ করার পাশাপাশি জেলার পানছড়ির প্যারাছড়ায় ধীরাজ চাকমা ও শন কুমার চাকমার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো খাগড়াছড়ি জেলায়। স্বজন হারিয়েও ভয়ে মুখ খুলছে না পরিবারগুলো।
আজ শেষকৃত্যের সময় স্বনির্ভর বাজারের পাশে উত্তর খবংপুড়িয়া এলাকায় রূপমের বাড়িতে দেখা যায় স্থানীয় নারী-পুরুষের আনাগোনা। ঢাকা থেকে রূপমের বড় ভাই অনুপম ও দিদি ছোট ভাইকে শেষবারের মতো দেখার জন্য সকালে পৌঁছেছেন বাড়িতে। ঘরের বাইরে উঠোনে চলছে কফিন বানানোর কাজ। তখন রূপমের গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ পড়ে রয়েছে ঘরের ভেতর।
একপর্যায়ে রূপমের বাবা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, ‘আপনারা কেন এসেছেন। চলে যান। আমার ছেলে মারা গেছে। আমি জানি।’ গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর ক্ষোভ দুঃখ ঝাড়লেন সুগত চাকমা।
একই এলাকায় জিতায়নের বাড়ি। তাঁর বাড়িতেও দেখা গেছে শেষযাত্রার যত আয়োজন। ক্ষোভে ফেটে পড়েন জিতায়নের মেয়েরাও। পলি চাকমা বলেন, ‘কী হবে এগুলো দেখিয়ে। আমার বাবা গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ঘণ্টা পড়ে ছিলেন। পুলিশের কাছে আকুতি করেছেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কেউ নেয়নি। আমরা কী নিয়ে বাঁচব!’
ওদিকে ধীরাজের মা ফুলকুমারী চাকমা ছেলেকে চিতায় তুলে দিয়ে কান্নায় বুক ভাসিয়েছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা যেন কারও জানা নেই।
শনিবারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে খাগড়াছড়িজুড়ে। বিজিবি ও পুলিশের টহল রয়েছে স্থানে স্থানে। ওই ঘটনায় আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। গ্রেপ্তারও নেই বলে জানিয়েছে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহদাত হোসেন।