কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদসহ ৩১ ছাত্রের জামিন

রাশেদ খান জামিন পেয়েছেন। খুশি তাঁর স্বজনেরা। রাশেদসহ ৩১ শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকা, ২০ আগস্ট। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
রাশেদ খান জামিন পেয়েছেন। খুশি তাঁর স্বজনেরা। রাশেদসহ ৩১ শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকা, ২০ আগস্ট। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সালেহা বেগম তাঁর ছেলের বউ রাবেয়া খাতুনকে জড়িয়ে ধরে নির্বাক রইলেন। তখন দুজনের চোখ দিয়ে লোনা জল গড়িয়ে পড়ছিল। সালেহা দুহাত ওপরে তুলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘আমার বাবা জামিন পেয়েছে...। এবার বাবাকে নিয়েই বাড়ি ফিরব।’

সালেহা বেগম কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানের মা। ছেলের গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঝিনাইদহ থেকে ঢাকায় আসেন। এর মধ্যে এক দিনের জন্যও বাড়ি যাননি। রাশেদের মতো কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার হওয়া আরও ১৮ জন ছাত্র আজ সোমবার জামিন পেয়েছেন। অন্যদিকে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার হওয়া আরও ১২ ছাত্রের জামিন দিয়েছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত।

এর আগে গতকাল রোববার ঢাকার আদালত থেকে জামিন পান আরও ৩২ জন ছাত্রসহ ৩৯ জন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের এসব মামলা হয়েছিল রাজধানীর শাহবাগ ও রমনা থানায়।

রাশেদের মায়ের মতো সকালে আদালতে আসেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা মশিউর রহমানের বাবা শফিকুল ইসলাম। পেশায় তিনি একজন রিকশাচালক। ছেলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে এক মাস হলো বাড়ি ফেরেননি। বড় ছেলের কাছেই থেকেছেন।

দুপুর ১২টার দিকে একবার কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের মামলার শুনানি হয়। তখন আদালত আইনজীবীকে বলেন, উচ্চ আদালতে যেহেতু জামিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে, সে কারণে তিনি শুনানি নিতে পারেন না। উচ্চ আদালত থেকে ওই আবেদন প্রত্যাহার করা হলে তিনি জামিন শুনানি গ্রহণ করতে পারবেন। যখন রাশেদদের আইনজীবী আদালতের কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন, জানতে পারেন জামিন হয়নি, তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন রাশেদের মা সালেহা বেগম।

রাশেদের মায়ের মতো কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক নেতা তারিকুলের বাবা শফিকুল ইসলামও কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি তখন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলের মাকে এখন কী জানাব। সে খুব অসুস্থ। আমি বলে এসেছি, আজ তোমার ছেলের জামিন হবে।’ আর মশিউরের বাবা রিকশাচালক মজিবর মশিউরের মাকে ফোন করেন। বলেন, ‘তাসলিমা তোমার ছেলের জামিন হয়নি।...কেঁদে কোনো লাভ নেই।’

তবে এই দৃশ্যপট বিকেল চারটার দিকে বদলে যায়। কারণ এর আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রাশেদদের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আদালতকে জানান, উচ্চ আদালতে করা জামিনের সেই আবেদন প্রত্যাহার করে এনেছেন। যাঁদের গ্রেপ্তার হয়েছে, সবাই ছাত্র। এক মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন তাঁরা। আদালত শুনানি নিয়ে রাশেদদের জামিন দেন ঢাকার মহানগর হাকিম শরাফুজ্জামান আনসারী।

জামিনের সংবাদ পাওয়ার পর রাশেদের মা সালেহা, সোহেলের মা জমিনা বেগম আনন্দে কাঁদতে থাকেন আদালতে। অন্য ছাত্রদের জামিন দিয়েছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোসহ অন্য মহানগর হাকিমগণ।