গাজীপুরের রিসোর্টগুলোয় অন্য রকম ঈদ বিনোদন

গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্ট। ছবি: রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে পাওয়া
গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্ট। ছবি: রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে পাওয়া

শালবনঘেরা জনপদ গাজীপুরের শ্রীপুর ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর সৌন্দর্য ভিন্ন রূপ পেয়েছে। এর মূলে এসব অঞ্চলে গড়ে ওঠা অত্যাধুনিক রিসোর্ট ও বিনোদনকেন্দ্র। প্রতিবারের মতো এই ঈদেও বিনোদনপ্রেমীদের জন্য ভিন্ন সাজে সেজেছে রিসোর্টগুলো।

দিচ্ছে নতুন নতুন সুবিধা। বিভিন্ন রিসোর্ট ঘুরে জানা গেল ঈদ বিনোদনে নতুন মাত্রা জোগাতে কী থাকছে সবুজবেষ্টিত এই জনপদের রিসোর্টগুলোয়।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাংনাহাটি গ্রামে আছে গ্রীনভিউ রিসোর্ট। সবুজে ঘেরা অত্যাধুনিক বিশাল রিসোর্ট। এর ভেতরে হাজারো গাছপালায় আচ্ছাদিত দুটি বিশাল ভবনে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত ২০টি কক্ষ আছে। খেলার মাঠ, সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম, মাছ শিকারের সুবিধাসহ রিসোর্টে পাওয়া যাবে চায়নিজ ও দেশি খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা। আছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা।

শালবনের সবুজের মধ্যে ভাওয়াল রিসোর্ট। ছবি: রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে পাওয়া
শালবনের সবুজের মধ্যে ভাওয়াল রিসোর্ট। ছবি: রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে পাওয়া

এ ছাড়া এতে গলফ খেলার ব্যবস্থাও আছে। গ্রীনভিউ রিসোর্টের তথ্য কর্নার থেকে জানানো হয়, এখানে দুই ধরনের কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষ এক দিনের জন্য ১৫ হাজার ৬৭৫ টাকা থেকে ১৮ হাজার ৪০০ টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করা যাবে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আনসার রোড থেকে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে এর অবস্থান।

গাজীপুরের শ্রীপুর ও সদর উপজেলার সীমান্তে নলজানি এলাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক মানের ভাওয়াল রিসোর্ট। দেশের প্রথম সারির কয়েকটি বিনোদনকেন্দ্রের মধ্যে এটির অবস্থান প্রথম দিকে। বিশাল জায়গাজুড়ে সবুজ বুকে ধারণ করে রেখেছে। নয়নাভিরাম ৬০টি কটেজ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সবুজের বুক ভেদ করে। আছে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সুবিধাসহ সুইমিং পুল। কি বারান্দা, কি ছাদ—সবখানে সবুজ আর সবুজ। একেকটি কটেজ একেক নকশায় তৈরি। কটেজের বিভিন্ন প্যাকেজে আছে রকমারি সব সুবিধা। প্রধান ফটকের নান্দনিক কারুকার্য যেকোনো দর্শনার্থীকে একবার ভেতরটা দেখে আসতে বাধ্য করবে। কড়া নিরাপত্তাবলয়ে ঘেরা এই বিনোদনকেন্দ্রে আছে স্পা, জিমনেশিয়াম, সুবিশাল খেলার মাঠ, উচ্চগতির ওয়াই-ফাইসহ আরও বিভিন্ন সুবিধা। জাদুকরি আলো-আঁধারি আর নিশাচর পাখির কলরবে রাতের সৌন্দর্য ক্যামেরা ক্লিকে বন্দী করে রাখার মতো।

ভাওয়াল রিসোর্টের সুইমিং পুলের পাশে বসে কাটাতে পারেন আয়েশি অবকাশ। ছবি: রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে পাওয়া
ভাওয়াল রিসোর্টের সুইমিং পুলের পাশে বসে কাটাতে পারেন আয়েশি অবকাশ। ছবি: রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে পাওয়া

ভাওয়াল রিসোর্টের রিসেপশন থেকে জানানো হয়, এখানে ঈদে বিনোদনপ্রেমীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে। বিশেষ আয়োজন থাকছে প্রতিটি কটেজে। ভাওয়াল রিসোর্টের কটেজগুলো সুবিধাভেদে প্রতি রাতের জন্য ১২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকার মধ্যে মিলবে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাঘেরবাজার থেকে কিছুটা দক্ষিণে গিয়ে পূর্ব দিকে ইজ্জতপুরের দিকের সড়ক ধরে মাত্র দুই কিলোমিটার গেলেই গহিন অরণ্যের ভেতর মিলবে ভাওয়াল রিসোর্টের দেখা।

ভাওয়াল রিসোর্টের এক কিলোমিটার পশ্চিম দিকে দরগারচারা গ্রামে অবস্থান সাবাহ গার্ডেন নামের আরও একটি বিনোদনকেন্দ্রের। পুরোনো এই পার্ক বিনোদনপ্রেমীদের আনন্দের খুব ভালো উৎস হতে পারে। এর ভেতরে রয়েছে বাচ্চাদের খেলার জন্য বিশাল প্লেগ্রাউন্ড, সবার জন্য বিশেষায়িত সুইমিং পুল, মাছ শিকারের জন্য বড় শানবাঁধানো পুকুরসহ খেলার মাঠ। পার্কের ব্যবস্থাপক মনির হোসেন বলেন, ঈদে বিনোদনপ্রেমীদের জন্য আমাদের পার্কে পার্টির ব্যবস্থাও থাকছে। একসঙ্গে ১০ হাজার মানুষের জন্য এখানে বিনোদনের ব্যবস্থা আছে।

গাজীপুরের শ্রীপুরের ড্রিমস্কয়ার। ছবি: পার্ক কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে পাওয়া
গাজীপুরের শ্রীপুরের ড্রিমস্কয়ার। ছবি: পার্ক কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে পাওয়া

শ্রীপুর উপজেলার আরও একটি রিসোর্টের নাম ড্রিমস্কয়ার। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা থেকে পূর্ব দিকে সলিং মোড় থেকে গাজীপুর যেতে চকপাড়া গ্রামে এর অবস্থান। ১২০ একরের সুবিশাল জায়গায় গড়ে উঠেছে রিসোর্টটি। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই রিসোর্টের কক্ষের ভাড়া ৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু। ৮০ হাজার টাকায় প্রেসিডেন্সি স্যুইটের কক্ষ পাওয়া যায়।

ড্রিমস্কয়ার রিসোর্টের ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান বলেন, প্রতিটি কক্ষ সর্বাধুনিক সুবিধাসহ ভাড়া পাওয়া যায়। এর ভেতর বিশাল সুইমিং পুল, খেলার মাঠ, আড্ডা দেওয়ার জন্য সবুজের ভেতর সুসজ্জিত বেঞ্চসহ অন্যান্য সুবিধা আছে। মাছ শিকারের জন্য আছে ছোট-বড় ১৬টি পুকুর।

ঈদ বিনোদনে ভিন্নমাত্র জোগাবে গাজীপুরের ভবানীপুর থেকে চার কিলোমিটার পূর্ব দিকে রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট, গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের সিঙ্গারদীঘি গ্রামে আছে সি গাল রিসোর্ট। এ ছাড়া ছোট-বড় আরও অন্তত ১০টি পার্ক তৈরি আছে ঈদে ঘুরতে আসা মানুষের জন্য।

সবুজে মোড়া ড্রিম স্কয়ারের মূল ফটক ভেতরে যাওয়ার হাতছানি দিচ্ছে। ছবি: পার্ক কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে পাওয়া
সবুজে মোড়া ড্রিম স্কয়ারের মূল ফটক ভেতরে যাওয়ার হাতছানি দিচ্ছে। ছবি: পার্ক কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে পাওয়া

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অবস্থান গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। প্রাণ আর প্রকৃতির এক অপরূপ মেলবন্ধন রয়েছে ৩৮১ একরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। এর অবস্থান রাজধানীর ৪২ কিলোমিটার উত্তরের বাঘেরবাজার এলাকায়। বাঘেরবাজার থেকে পশ্চিম দিকে চার কিলোমিটার দূরে ইন্দ্রপুর বাজারে পৌঁছালেই দূর থেকে চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন সাফারি পার্কের প্রধান ফটক। কংক্রিটে নির্মিত বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো ফটকটি। প্রবেশ টিকিট জনপ্রতি ৫০ টাকা। ভেতরে প্রবেশের পর বিভিন্ন প্রাণীর জন্য সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করতে হলে আলাদাভাবে নির্ধারিত দামে টিকিট কিনতে হবে। পার্কটির প্রধান আকর্ষণ হলো আফ্রিকান কোর সাফারি। এটি একটি বিশেষায়িত প্রাণীর বাসস্থান, যেখানে আফ্রিকা থেকে আনা বাঘ, সিংহ, হরিণ, জিরাফ, বনগরু, জেব্রাসহ আরও অনেক প্রাণী রয়েছে। পার্কের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ছয়টি পর্যটক বাসে করে কোর সাফারি দেখার সুযোগ রয়েছে।

গাজীপুরের শ্রীপুরে সাবা গার্ডেন। ছবি: পার্ক কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে পাওয়া।
গাজীপুরের শ্রীপুরে সাবা গার্ডেন। ছবি: পার্ক কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে পাওয়া।

এ ক্ষেত্রে জনপ্রতি খরচ করতে হবে ১০০ টাকা। পার্কে রয়েছে ‘৯ডি’ থিয়েটার। এখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে প্রাণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে তথ্যচিত্র দেখানো হয়। কুমির প্রজননকেন্দ্র, প্রজাপতি পার্ক, প্রাণী জাদুঘর, ওয়াটার ডিসকভারি, ওয়াচ টাওয়ার, ম্যাকাও, ময়ূর, কবুতর, ওয়াটার বোটসহ বিভিন্ন ইভেন্ট রয়েছে পার্কজুড়ে। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে আধুনিক থিমপার্ক, যাতে সর্বশেষ সংযোজন করা হয়েছে রোমাঞ্চকর রোলার কোস্টার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিটি ছুটির দিনেই এখানে দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। প্রতি ঈদে এই পার্কে দর্শনার্থীর ঢল সামলাতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়। এই ঈদেও প্রচুর দর্শনার্থীর আশা করছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।