হাঁসে অভাব ঘুচল দুই বন্ধুর

হাঁসের খাবার দিচ্ছেন আলম মিয়া। সম্প্রতি তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামে।  প্রথম আলো
হাঁসের খাবার দিচ্ছেন আলম মিয়া। সম্প্রতি তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামে। প্রথম আলো

আলম মিয়া ও সুবাস চন্দ্র দাস দুই বন্ধু। হাওরের বর্গাচাষি তাঁরা। কিন্তু হাওরে অকালবন্যায় ফসলহানিতে একসময় অভাবে পড়ে যান। তখন স্থানীয় একজনের পরামর্শে হাঁস পালন শুরু করেন। এই হাঁস পালনেই এখন দুই বন্ধুর অভাব দূর হয়েছে। তাঁদের দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন হাঁস পালনে।

আলম ও সুবাসের বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরপারের গ্রাম আনোয়ারপুরে। চার বছর ধরে তাঁরা হাঁস পালন করছেন। হাঁস পালনের আয় দিয়েই এখন দুই বন্ধুর সংসার আর ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চলে। একই সঙ্গে বোরো মৌসুমে হাওরে কিছু জমি বর্গা চাষ করেন।

আলম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। সবাই স্কুলে যায়। একসময় তাঁদের লেখাপড়া আর সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁর। এখন হাঁস পালনের আয়েই সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসার চলে।

সুবাস চন্দ্র দাসের পরিবারে সদস্যসংখ্যা আটজন। তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে কলেজে পড়েন। অন্যরা স্কুলে যায়। এই হাঁস পালনের আয় থেকেই তাদের লেখাপড়া ও সংসার চলে। সুবাস বলেন, ‘হাওরের ধানের ওপর তো ভরসা নাই। পাহাড়ি ঢল আর অকালবন্যায় যেকোনো সময় ধান তলিয়ে যেতে পারে। হাঁস পালনের চিন্তা না করলে এখনো অভাবের মধ্যেই থাকতাম। হাঁস পালন করে ভালোই আছি।’

আলম ও সুবাসের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চার বছর আগে অকালবন্যায় হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে গেলে তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁদের হাঁস পালনের পরামর্শ দেন। তখন দুই বন্ধু মিলে ময়মনসিংহ থেকে ৩০০ হাঁসের বাচ্চা কিনে আনেন। এরপর উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে হাঁস পালনের ওপর দুই দিনের প্রশিক্ষণ নেন তাঁরা। এই প্রশিক্ষণ তাঁদের উপকারে এসেছে।

আলম ও সুবাসের খামারে দেড় হাজার হাঁস রয়েছে। ময়মনসিংহ থেকে তাঁরা এক দিন বয়সী হাঁসের বাচ্চা কিনে আনেন। প্রতিটি বাচ্চার দাম পড়ে ১৭ থেকে ২২ টাকা। তিন মাস লালনপালনের পর সেগুলো বিক্রি করেন। তখন ১০০টি হাঁস বিক্রি হয় ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকায়। পাইকারেরা বাড়ি থেকেই এসব হাঁস কিনে নিয়ে যান। বছরে আলম ও সুবাসের লাভ হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।

আনোয়ারপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বুলবুল আহমদ বলেন, শুধু আলম ও সুবাস নন, গ্রামের অনেকেই এখন হাঁস পালন করছেন। এতে অনেকেরই দিন বদলেছে। হাওরের ফসলের ওপর এলাকার মানুষ এখন আর পুরোপুরি ভরসা করতে পারেন না। বিশেষ করে গত বছর হাওরের সম্পূর্ণ ফসল তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে ফসলের বিকল্প কোনো কিছু করার তাগিদ জন্মেছে।