আশা ছাড়েনি বিএনপি

>
  • বৃহত্তর ঐক্যে জামায়াতকে বাধা মনে করা হচ্ছে 
  • সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বড় ঐক্য দৃশ্যমান হতে পারে
  • ঐক্য প্রক্রিয়ায় নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি
  • ঐক্য না হলে একাই আন্দোলনে নামবে বিএনপি
  • ঐক্য হলে নির্দিষ্টসংখ্যক আসন ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা বিএনপির

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মৌলিক বিষয়গুলোতে একমত হলেও গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট ও বিএনপির বৃহত্তর ঐক্য এগিয়েও এগোচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে জামায়াতকে বাধা মনে করা হচ্ছে। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা এখনো বৃহত্তর ঐক্যের আশা ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত যদি বড় ঐক্য গড়া সম্ভব না হয়, তাহলে যাদের পাশে পাওয়া যাবে, তাদের সঙ্গে নিয়েই এগোবে বিএনপি।

দলটির নেতারা বলছেন, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষ নাগাদ সব দলকে নিয়ে সরকারবিরোধী একটি বড় ঐক্য দৃশ্যমান হবে। তাতে গণফোরাম, যুক্তফ্রন্টসহ বাম প্রগতিশীল ধারার বেশ কিছু দল সম্পৃক্ত হবে। এ লক্ষ্যে বিএনপির পাশাপাশি নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধির একটা প্রচেষ্টা আছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, লন্ডনপ্রবাসী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পরামর্শে গত সপ্তাহে ভাইস চেয়ারম্যান পদমর্যাদার একজন নেতা যুক্তফ্রন্ট, গণফোরাম ও আটদলীয় বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাদা কথা বলেন। এর বাইরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গেও ওই নেতার কথা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর মধ্যে কয়েকজন নেতা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে যুগপৎ আন্দোলনে নামতে একমত হয়েছেন। আর যুক্তফ্রন্টসহ ওই কেন্দ্রিক দু-তিনজন নেতার কথায় বিএনপির ওই নেতা পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারেননি। তিনি বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে অবহিত করেছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে একজন নেতা খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলে তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিবেশী একটি দেশের অসন্তুষ্টি রয়েছে বলে জানান। আরেকজন নেতা আন্দোলনের পর সরকারে গেলে এর পরিচালনা-কাঠামো কেমন হবে, সে বিষয়ে আগাম সমঝোতার অভিপ্রায় তুলে ধরেন।

বিএনপি সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে হলেও বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চায়। দলটির উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলছে, ঐক্য গড়তে বিএনপির তরফ থেকে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আনা, সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি কী করবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার করতেও প্রস্তুত। ঐক্য হলে গণফোরাম ও যুক্তফ্রন্টকে আলোচনা সাপেক্ষে নির্দিষ্টসংখ্যক আসন ছেড়ে দেওয়ারও চিন্তা আছে বিএনপির।

বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন অনেক দিন ধরে জাতীয় ঐক্যের কথা বলে আসছিলেন। এর মধ্যে বিকল্পধারা, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। এই ফ্রন্টের বড় নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সম্প্রতি যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছে। তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করবেন। যুক্তফ্রন্ট, গণফোরামসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোকে নিয়ে অনেক দিন ধরে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। কিন্তু ঐক্য-প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েও থমকে আছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচনে সেনা মোতায়েনসহ আরও কিছু মৌলিক বিষয়ে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের সঙ্গে বিএনপির ঐকমত্য আছে। কিন্তু বিপত্তি বাধে ২০-দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে। জামায়াত সঙ্গে থাকায় দলগুলো বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করতে রাজি হচ্ছিল না। বিএনপিও বিষয়টি বুঝে জামায়াতকে এ প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রেখে এগোচ্ছিল। তারা চাইছে দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য হলে নব্বইয়ের আদলে যুগপৎ আন্দোলন করা।

জামায়াতকে নিয়ে নতুন করে কথা ওঠে গত মঙ্গলবার ড. কামাল হোসেন ও বিকল্পধারার নেতা মাহী বি চৌধুরীর বক্তব্যের পর। কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী থাকলে তাঁরা বিএনপির জোটে যাবেন না। আর মাহী একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিএনপি ২০-দলীয় জোটে জামায়াতকে রাখলে বিকল্পধারা সেই ঐক্যে থাকবে না। অবশ্য কামাল হোসেন এও বলেছেন, জামায়াত এখন আর কোনো নিবন্ধিত দল না। ফলে তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলন বা নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে যুক্তফ্রন্টের মুখপাত্র মাহমুদুর রহমান মান্না প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আমাদের লিখিত অঙ্গীকার যে আমরা কোনো স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সঙ্গে ঐক্য করব না। আমরা ঐক্যটা করছি বিএনপির সঙ্গে, ২০ দলের সঙ্গে নয়। এখন বিএনপি কার সঙ্গে চলে, ঘোরে, এটা আমাদের দেখার বিষয় না।’

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, এখন দেশে গণতন্ত্র নেই। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। ভোটের অধিকার নেই। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন। তার জন্য নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রয়োজন। এর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কী সম্পর্ক?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। সে জন্য কি আমরা এই দাবি করব না? ঐক্যের জন্য যারা এসব ছুতা খোঁজে, বুঝতে হবে তাদের অন্য কোনো মতলব আছে।

বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, যুক্তফ্রন্টের কয়েকজন নেতার সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে সরকার থেকে বড় ব্যবসায়িক সুবিধা পেয়েছেন। তাই সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য যাতে না হয়, সে জন্য তাঁরা জামায়াতে ইসলামীকে বাধা হিসেবে দেখছেন।

ঐক্য-প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতে ইসলামী বা ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে ঐক্য হবে না। নির্বাচনী ঐক্যটা হবে বিএনপির সঙ্গে।

আর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্য হবেই। কেউ যদি এই ঐক্যে সম্পৃক্ত না হয়, তাহলে বিএনপি একাই নামবে এবং তাতে বিএনপি সফল হবেই।’

আরও পড়ুন