শৃঙ্খলা ফিরেছে গোলচত্বরে

রাত–দিন তীব্র যানজট। এই ছিল মিরপুর–১০ গোলচত্বরের নিত্যদিনের চিত্র। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ ও স্কাউট সদস্যদের তৎপরতায় যানজটমুক্ত হয়েছে পুরো চত্বর। গতকাল দুপুরে।  প্রথম আলো
রাত–দিন তীব্র যানজট। এই ছিল মিরপুর–১০ গোলচত্বরের নিত্যদিনের চিত্র। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ ও স্কাউট সদস্যদের তৎপরতায় যানজটমুক্ত হয়েছে পুরো চত্বর। গতকাল দুপুরে। প্রথম আলো

সড়কে নেই গণপরিবহনের জটলা। নিয়ম মেনে পদচারী-সেতুতে উঠছে সাধারণ মানুষ। স্টপেজ মেনে থামছে বাস। যাত্রী ওঠা-নামায় নেই তাড়াহুড়া। চিরচেনা যানজট থেকে প্রায় মুক্ত পুরো চত্বর। বদলে যাওয়া এই দৃশ্যপট মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরের।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায়, গোলচত্বরের প্রতিটি প্রবেশপথে স্কাউট সদস্যরা অবস্থান করছেন। নিয়ম না মেনে চলা পথচারীর পথ আগলে দাঁড়াচ্ছেন তাঁরা। এতে তারা পদচারী-সেতু ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। যে কারণে ভিড় লেগে গেছে পদচারী-সেতুতে। তা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজের রোভার স্কাউট সদস্য রুবেল মিয়া। তিনি বলেন, ‘এ মাসের ৫ তারিখ থেকে আমরা রোভার স্কাউটের ৩০ সদস্য এখানে কাজ করছি। যখন আসি তখনকার অব্যবস্থাপনার কথা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। এ অবস্থার পরিবর্তন করা যাবে কি না, তা নিয়ে আমি নিজেও শঙ্কিত ছিলাম। কিন্তু সবার চেষ্টায় গোলচত্বরের সড়ক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে।’

গতকাল গাড়িগুলোকে ট্রাফিক সংকেত মেনে নির্দিষ্ট স্থানে থামতে দেখা গেছে। নিয়ম মানার এ দৃশ্য দেখে বিস্মিত অফিসগামী ওয়াসিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘চালকদের এ নিয়ম মানা দেখে খুব ভালো লাগছে। আর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরের মতো জায়গায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এটা সত্যি অবিশ্বাস্য।’

জানা গেছে, মিরপুর-১, ১২, ১৩, ১৪ থেকে ১৫-২০টি রুটের বাস মিরপুর-১০ গোলচত্বর হয়ে যাতায়াত করে। এর বাইরে মিরপুর-১০-এর চারপাশ ঘিরে ২০ থেকে ২২টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান। এ কারণে প্রায় সারা দিন চত্বর ঘিরে পথচারী ও যানবাহনের তীব্র চাপ থাকে। আর আশপাশের ফুটপাতগুলো অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় পথচারীরাও দুর্ভোগে পড়ে নিত্যদিন।

গতকাল দেখা যায়, গোলচত্বরের পূর্ব পাশের ফুটপাতে পথচারীদের দীর্ঘ সারি। লোকজন রীতিমতো লাইন ধরে পদচারী-সেতুতে উঠছে। কিন্তু এতে বিন্দুমাত্র বিরক্তি নেই সাধারণ মানুষের। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পথে নামল, তারপর থেকে একটা বোধোদয় হয়েছে। তাই এখন পদচারী-সেতু ব্যবহার করছি। আর গোলচত্বর ঘিরে স্কাউট সদস্যদের ভূমিকা অতুলনীয়। তাঁদের অনমনীয় মনোভাবের কারণেই আমরা আইন মানতে বাধ্য হচ্ছি।’

স্কাউট সদস্যদের পাশাপাশি পল্লবী জোনের ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকাও ছিল চোখে পড়ার মতো। নির্দিষ্ট স্টপেজের বাইরে কোনো যানবাহনকেই দাঁড়াতে দিচ্ছিল না তারা। আইন না মানলে জরিমানাও করা হচ্ছিল।

কথা হয় সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইয়াসমিন সাইকা পাশার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের কারণে মূল সড়কের ১১ ফুট জায়গা কমে গেছে। তাই এখানে ট্রাফিক সামলানো সত্যি সত্যি দুরূহ কাজ। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস ছিল পথচারীদের সামলানো গেলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। স্কাউদের সহযোগিতায় আমরা তা করতে পেরেছি। তাই এ পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন থেকে আমরা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে তাদেরও বড় ভূমিকা রয়েছে।’