ঔষধি গাছে জীবন-জীবিকা

নাজমীন আক্তার ও আইয়ুব আলীর ঔষধি বাগান। খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কাতিয়ানআংলায়।  ছবি: প্রথম আলো
নাজমীন আক্তার ও আইয়ুব আলীর ঔষধি বাগান। খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কাতিয়ানআংলায়। ছবি: প্রথম আলো

রাবণের শক্তিশেলের ঘায়ে জ্ঞান হারানো লক্ষ্মণকে বাঁচাতে রামের নির্দেশে মহৌষধি ‘বিশল্যকরণী’ আনতে হনুমান গিয়েছিল গন্ধমাদন পর্বতে। বিশল্যকরণী চিনতে না পেরে গোটা পর্বতই তুলে নিয়ে এসেছিল হনুমান। পরে ওই গাছের কল্যাণেই জীবন ফিরে পান লক্ষ্মণ। রামায়ণে বর্ণিত সেই বিশল্যকরণীর দেখা মিলল খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের কাতিয়ানআংলা গ্রামের একটি বাড়িতে। শুধু ওই গাছই নয়, বাড়িটিতে রয়েছে নাগেশ্বর, কর্পূর, শ্বেত জয়ন্তী, অশোক, জয়ন্তী, অশ্বগন্ধা, সর্পগন্ধা, হলুদ বাসক, শ্বেত পলাশ, লজ্জাবতী, বিলিম্বিসহ দুই হাজার প্রজাতির ১০ হাজারের বেশি ঔষধি গাছ। ঔষধি গাছের এই বাগান তৈরি করেছেন নাজমীন আক্তার ও আইয়ুব আলী দম্পতি।

খুলনা-চালনা সড়কের পাশে কাতিয়ানআংলা বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে কিছুটা এগোলেই চোখে পড়ে বাড়ির প্রধান ফটক। ফটকে লেখা জিনিয়া ঔষধি বাগান। প্রবেশপথের দুই পাশে তুলসীগাছের সারি। একটু এগোলেই সারি সারি বাসকগাছ। বাগানের এক জায়গায় বসে জৈব সার মিশিয়ে গাছের মাটি তৈরি করছিলেন একজন। পরিচয় দিলেন, তিনিই আইয়ুব আলী। বাগানে গাছের পরিচর্যা ও আগাছা পরিষ্কার করছিলেন তাঁর স্ত্রী নাজমীন। সঙ্গে ছিলেন একজন সহকারী।

জানা গেল, ২০০১ সালে তাঁরা ঔষধি গাছের বাগান তৈরি শুরু করেন। এখন এটাই তাঁদের নেশা ও পেশা। দেশের পাহাড়ি অঞ্চলসহ ভারত, নেপাল, কোরিয়া থেকে ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছ ও বীজ জোগাড় করেন তাঁরা।

বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত নাজমীন আক্তার ও আইয়ুব আলী। ছবি: প্রথম আলো
বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত নাজমীন আক্তার ও আইয়ুব আলী। ছবি: প্রথম আলো

১৯৯৩ সালে বিয়ের পর আইয়ুব শুরু করেছিলেন মাছের ব্যবসা। ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা নিয়ে সাগরে যেতেন জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনতে। একদিন জলদস্যুরা হামলা করে টাকা ও মাছ ছিনিয়ে নেয়। প্রায় পথে বসার জোগাড় হয়। একপর্যায়ে স্ত্রীর পরামর্শে শুরু করেন গাছ লাগানো। ২০০৬ সাল থেকে তাঁদের বসতবাড়িসহ ১ একর ১৫ শতকের বাগান মোটামুটি সমৃদ্ধ হওয়া শুরু করে।

ঔষধি গাছের এই বাগান থেকে এখন তাঁদের মাসিক আয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। ঔষধি গাছের প্রধান ক্রেতা কবিরাজেরা। নার্সারির মালিকেরাও চারা কেনেন। এই দম্পতি বলেন, ‘বাজারে ঔষধি গাছের চাহিদা বেশি, দামও ভালো। আমরা পরবর্তী প্রজন্মকেও এই কাজে আগ্রহী করে তুলতে চাই। তাই বড় মেয়ে জিনিয়া আক্তারকে পড়াচ্ছি খুলনা ইউনানি মেডিকেল কলেজে।’

নাজমীন আক্তার ২০১৫ সালে খুলনা বিভাগে কৃষিতে নারীর অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২০১৬ সালে বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার পান তিনি। বাড়ির আঙিনায় একটি ফ্রি চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র গড়ে তোলার স্বপ্ন আছে তাঁদের।

বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবাশীষ চৌধুরী প্রথম আলোকে বললেন, এ ধরনের উদ্যোগ অনেকের জন্য আদর্শ হতে পারে।