আ.লীগে সাংসদবিরোধী জোট

ফজলুর রহমান (পটল) মারা যাওয়ার পর বিএনপিতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রার্থী নেই। এ অবস্থায় দলে তিনজন মাঠে আছেন। আর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছেন অন্তত আটজন নেতা।  

এই আসনে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে সাংসদ হন বিএনপির ফজলুর রহমান। ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ফজলুর রহমানকে হারিয়ে জয়ী হন জাপার আবু তালহা।

 আওয়ামী লীগে সাংসদবিরোধী জোট

২০০৮ সালে মহাজোটের শরিক জাপাকে আসনটি ছেড়ে দিলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আসনটি নিজেদের হাতে রাখে আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আবুল কালাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তিনি এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি বলেন, ‘নেত্রী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য মাপকাঠি ঠিক করে দিয়েছেন। সেই মাপকাঠিতে আমিই মনোনয়ন পাব বলে আশা করছি,  না দেওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।’

তবে সাংসদের প্রত্যাশায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন তাঁরই বড় ভাই প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সাংসদ মমতাজ উদ্দিনের স্ত্রী শেফালী মমতাজ। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ হয়েছিলেন। তালিকায় আরও আছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. আনিছুর রহমান, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, প্রয়াত সাংসদ মমতাজ উদ্দিনের ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক শামীম আহমেদ, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক সিলভিয়া পারভীন, বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাজেদ উর রহমান এবং বাংলাদেশ প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা রমজান আলী সরকার।

শুরুতে এই নেতারা স্বতন্ত্রভাবে প্রচারণায় ছিলেন।  গত ঈদের পরের দিন আতিকুল হক সাংসদবিরোধী ১২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীকে তাঁর ভাটপাড়ার বাড়িতে আমন্ত্রণ করেন। সেখানে প্রকাশ্যেই সবাই সাংসদের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেন।

আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমি প্রত্যেক ভোটারের দুয়ারে দুয়ারে নৌকার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। একজন সাদামনের মানুষ হিসেবে সবার সমর্থন চাচ্ছি।’

শহিদুল ইসলাম শোভাযাত্রা, সভা, সমাবেশ করছেন। আতিকুল হক সাংসদবিরোধী নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টায় আছেন। শেফালী মমতাজ সাংসদের বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠ গরম করছেন।  

শেফালী মমতাজ বলেন, ‘আবুল কালাম সাংসদ হওয়ার পর দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির রাজনীতি করেছেন। শুধু লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য কোনো নেতা তাঁর সঙ্গে নেই। আমরা সবাই তাঁর বিরুদ্ধে জোট করেছি। আমাদের মধ্যে যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে কারও কষ্ট থাকবে না।’

আওয়ামী লীগের কোন্দল জোরালো হওয়ায় জাপাকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় কি না, তা নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে এলাকায়। জাপার সাবেক সাংসদ আবু তালহা বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান আমাকে এই আসনের প্রার্থী হিসেবে ঠিক করে দিয়েছেন। আমি ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর এলাকার জন্য অনেক কাজ করেছি। বর্তমান সাংসদ কিছুই করতে পারেননি। তিনি এক কিলোমিটার রাস্তার বরাদ্দও আনতে পারেননি।’

মহাজোটের আরেক শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকেও দাবি করা হচ্ছে, এবার এখানে তাদের দলের প্রার্থী দেওয়া হতে পারে।  

তবে জোটের শরিকদের আসনটি ছাড়ার ব্যাপারে সাংসদ আবুল কালাম বলেন, ‘যে ঘরে সুসন্তান রয়েছে, সেখানে অন্য কাউকে ধার করে আনার তো দরকার দেখছি না।’

বিএনপিতেও কোন্দল

ফজলুর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী ও লালপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য কামরুন নাহার মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। কামরুন নাহার বলেন, তাঁর স্বামী ফজলুর রহমানকে লালপুর-বাগাতিপাড়ার উন্নয়নের রূপকার হিসেবে দেখা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর নেতা-কর্মীদের অনুরোধে তিনি নির্বাচন করতে চাইছেন।

কামরুন নাহারের বিপরীতে প্রচারণায় আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও গোপালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মঞ্জুরুল ইসলাম, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তরিকুল ইসলাম এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম (টিপু)। এ নিয়ে বিএনপিতে কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

কামরুন নাহার বলেন, ‘আমার স্বামী লালপুর-বাগাতিপাড়ার সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর নীতি-আদর্শ যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁরা কেউ আমার মনোনয়নের বিরোধিতা করবেন না।’

তাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ফজলুর রহমান আমাদের গুরু ছিলেন। তাই বলে তো তাঁর পরিবারের সবাই আমাদের গুরু হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেননি।’

মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য অগ্নিপরীক্ষা। নির্বাচনে লড়াই করার জন্য প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, আর্থিক সচ্ছলতা ও শারীরিক সুস্থতা থাকা দরকার। এসব বিবেচনা করে দল তাঁকে মনোনয়ন দেবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

অন্যান্য দল

বিএনপি জোটের শরিক জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক তাসনিম আলম এখানে পোস্টার-লিফলেট বিতরণ করে প্রার্থিতার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এ আসনে জামায়াতের কিছু ভোট আছে। এ ছাড়া ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের লালপুর উপজেলা সভাপতি মো. খালেকুজ্জামান এবং জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল কুমার রায় ও দলটির অঙ্গসংগঠন জাতীয় যুব জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জামাল উদ্দিন প্রচারণায় আছেন।