সুগন্ধি বিলানো পোলাওপাতা

পোলাওপাতাগাছ। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে।  ছবি: লেখক
পোলাওপাতাগাছ। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে। ছবি: লেখক

নড়াইলের লোহাগড়ার ইতনা গ্রামে গিয়েছিলাম সাহিত্যিক নীহাররঞ্জন গুপ্তের বাড়ি দেখতে। সেখানে গিয়ে পাশের এক বাড়িতে দেখা পেলাম পোলাওপাতার। পাতা হাতে ডলে নাকে শুঁকলে অবিকল পোলাওয়ের ঘ্রাণ! বুড়ো কি কচি, সব পাতায়ই সমান ঘ্রাণ।

বর্ষার জল পেয়ে তাগড়া হয়ে উঠেছে গাছগুলো। একেবারে চেকনাই চেহারা। দেখতে কেয়াগাছের মতো হলেও কেয়াগাছের মতো বড় নয়। পাতার দুই পাশে কেয়াপাতার মতো কাঁটাও নেই। পোলাওপাতা সরু, লম্বা ও তলোয়ারের মতো খাড়া; অগ্রভাগ তীক্ষ্ণ। আনারসের গোড়ার মতো মোথা আছে গোড়ায়। সেখান থেকে অনেকগুলো পাতা পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে ঝোপে রূপ নেয়। পাতা নরম। আঙুল দিয়ে ডললে সহজেই রস বেরিয়ে আসে। রস শুকানোর পরও আঙুলে অনেকক্ষণ ঘ্রাণ লেগে থাকে।

খাবার সুগন্ধি করতে এ পাতা ব্যবহার করা হয়। ফিরনি-পায়েস রাঁধতে কেউ কেউ এ পাতা ব্যবহার করেন। সাধারণ চালের ভাত থেকেও পোলাওয়ের সুবাস ছোটান কেউ কেউ। এর জন্য কয়েকটি পাতা আঁটি করে ভাত নামানোর একটু আগে পাতিলে দিয়ে দিলেই হয়। পরে ভাত থেকে পাতা তুলে নিতে হয়। কেউ কেউ নারকেলের দুধের মধ্যে এ পাতা চুবিয়ে সেই দুধ দিয়ে নানা কিছু রান্না করেন সুঘ্রাণের জন্য।

পোলাওপাতাগাছ বহুবর্ষী। গোড়ায় জন্মানো ছোট ছোট চারা আলাদা করে লাগালে এর বংশবৃদ্ধি হয়। সাধারণত বসতবাড়িতে লাগানো হয়। তেমন কোনো যত্ন করতে হয় না। একবার লাগালে দ্রুত বাড়তে থাকে গাছ। একসময় সেই ঝোপ পরিষ্কার করাই দায় হয়ে পড়ে। টবেও লাগানো যায়। বদ্ধ ঘরে, লিফটে টবের গাছ রেখে দিলে তা না শুকানো পর্যন্ত সেখানে মৃদু সুগন্ধ বিলায়, যা প্রাকৃতিক এয়ার ফ্রেশনার হিসাবে কাজ করে। স্যাঁতসেঁতে বা আর্দ্র জায়গায় গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। তাই আধোছায়া জায়গায় এ গাছ লাগানো যায়। এ গাছের ফুল ফুটতে দেখা পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার।

কেয়াগাছের স্বগোত্রীয় চিরসবুজ এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Pandanus amaryllifolius. পরিবার প্যানডানেসি। এ গাছ জ্বর সারানো, মুখে রুচি আনা ও হজমে সাহায্য করে বলে অনেকের বিশ্বাস।

খাবার সুগন্ধি করতে দ‌ক্ষিণ ও দ‌ক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই পোলাওপাতা ব্যবহার করা হয়। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশে এ গাছের পাতা বাজারে বিক্রি হয়। দোকানে বোতলভরা কাঁচা পাতার রসও বিক্রি হয়।

বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলায় এ গাছ বেশি দেখা যায়। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় প্রভৃতি জেলায় এটি বেশি দেখা গেছে। চট্টগ্রামেও এ গাছ দেখা যায়।

এদেশে পোলাওপাতা চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যবসায়ীরা ভাবতে পারেন।