কামাল হোসেনের নেতৃত্ব মানতে রাজি বিএনপি

প্রবীণ আইনজীবী ও রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন। ফাইল ছবি
প্রবীণ আইনজীবী ও রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন। ফাইল ছবি
  • বৃহত্তর জোট গঠনের চূড়ান্ত পর্যায়ে বিএনপি
  • দুঃসময়ে বি চৌধুরীকে পাশে চায় বিএনপি
  • বি চৌধুরীকে পাশে পাওয়া নিয়ে বিএনপির সংশয়
  • বি চৌধুরীকে না পেলে ড. কামালের নেতৃত্বে জোট গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত
  • মির্জা ফখরুল দেশে ফিরে ড. কামালের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন
  • গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট ছাড়াও দুটি বাম দল-জোটের সঙ্গে যোগাযোগ

নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘বৃহত্তর জোট’ গঠনের চূড়ান্ত পর্যায়ে বিএনপি। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, প্রয়োজনে প্রবীণ আইনজীবী ও রাজনীতিক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই জোট হতে পারে। যুক্তফ্রন্ট, গণফোরাম ও কয়েকটি বাম দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাবে বিএনপি।

দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, তাঁরা এখনো আশায় আছেন যে বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির ও জাতির দুঃসময়ে নতুন জোটের অগ্রভাগে থাকবেন। কারণ, তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। তবে তাঁর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া এবং যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের যৌথ কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকা নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত বি চৌধুরীকে পাশে না পেলে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সায় আছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতিসংঘ থেকে লন্ডন হয়ে দেশে ফিরে কামাল হোসেনের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘না, না, না। আমি এ রকম কোনো সম্ভাবনা দেখি না।’ তবে তিনি বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া যাতে বেগবান হয়, সে লক্ষ্যে তাঁর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে গত এক সপ্তাহে গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট ও দুটি প্রভাবশালী বাম দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা দেশের বর্তমান গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোটাধিকার ও আইনের শাসনের দুরবস্থা থেকে মুক্তির প্রশ্নে একমত হয়েছেন। তবে ওই নেতাদের জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আপত্তি আছে। তাই বিএনপির সঙ্গে সরাসরি জোট বাঁধবে না গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট ও বাম দলগুলো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিদলীয় বলয় থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে বাম জোট কাজ করছে। এ লক্ষ্যে তাঁরা অবিচল। তাই বিএনপি থাকলে ওই জোটে তাঁদের থাকার সুযোগ নেই।

এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের সঙ্গে থাকা দলগুলো ছাড়া অন্যদের এক মঞ্চে আনার চেষ্টা করছেন কামাল হোসেন ও তাঁর নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। এর অংশ হিসেবে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা খুলনা সফর করেছেন। ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশ করার কথা। তাতে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী বাদে বিএনপিসহ সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সমাবেশ থেকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের একটি রূপরেখা ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে। সমাবেশে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রধান বক্তা হিসেবে থাকার কথা রয়েছে।

কামাল হোসেন আশা করেন, ২২ অক্টোবরের সমাবেশের বি চৌধুরী ও মির্জা ফখরুল ইসলাম উপস্থিত থাকবেন।

জানতে চাইলে সমাবেশে আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে যাবেন কি না, দলীয়ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জানা গেছে, বৃহত্তর ঐক্য গড়তে কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। আটটি দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটের ছয়টির সঙ্গে ইতিমধ্যেই তাঁদের আলোচনা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে কামাল হোসেনের সঙ্গে তাঁর বাসায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনের নেতাদের বৈঠক হয়। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমাদের প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মতাদর্শগত মিল থাকা দলগুলোর একসঙ্গে কাজ করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

নির্বাচন সামনে রেখে ১৫ সেপ্টেম্বর ৫ দফা দাবি এবং ৯ দফা লক্ষ্য প্রকাশ করে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিল বি চৌধুরীর। কিন্তু তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়ে যাননি। বিকল্পধারার জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাউকেও সেখানে দেখা যায়নি। এরপর থেকেই ঐক্য প্রক্রিয়ায় ভাঙনের গুঞ্জন ওঠে।

অবশ্য মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সব বিষয়কে রাজনীতিতে নিয়ে আসাটা অনভিপ্রেত। যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার যৌথ উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হবে। স্বাধীনতাবিরোধী বাদে বাকি দলগুলোকে বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ায় আনার আলোচনাও অব্যাহত আছে।

জানা গেছে, বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ত্রিদলীয় জোট যুক্তফ্রন্ট বৃহত্তর ঐক্যে না এলে তাতে ভাঙন ধরতে পারে। আ স ম আবদুর রবের জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকবেন। কামাল হোসেনের সঙ্গে খুলনা সফরে রব, মান্না ছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন।

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা বৃহত্তর ঐক্যের ব্যাপারে খুব আশাবাদী। এ জন্য নির্বাচনে আসন ছাড়া, নেতৃত্বের ব্যাপারেও প্রয়োজন হলে ছাড় দিতে তাঁদের মানসিক প্রস্তুতি রয়েছে। গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐক্যের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অন্য কেউ উড়ে এসে আপনাদের রক্ষা করবে না। তাই ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।’

বিএনপির সূত্র জানায়, বিকল্পধারার দুই নেতাকে নিয়ে শুরু থেকেই দলে সংশয় ছিল। কারণ, সরকারের সঙ্গে এই দুজনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। এ জন্য তারা বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধতে অনাগ্রহী। কিন্তু এটাকে পাশ কাটানোর লক্ষ্যে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীকে সামনে আনা হয়েছে কৌশল হিসেবে। যদিও এ বিষয়ে বিএনপির নেতারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।