শত বছরের গ্রামীণ মেলা

মহররমের মেলায় মাটির তৈজসপত্রের দোকান। গত শুক্রবার মেহেরপুর সদর উপজেলার    কুতুবপুর গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
মহররমের মেলায় মাটির তৈজসপত্রের দোকান। গত শুক্রবার মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

মেহেরপুর সদরের কুতুবপুর গ্রামে মহররমের মেলাটি বসছে এক শ বছরের বেশি সময় ধরে। এক দিনের এই মেলাটি বসে ১০ মহররম। আশপাশের জেলার মানুষ আসে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এই মেলার অংশী হতে। এবারও মেলাটি বসেছিল গত শুক্রবার। মুজিবনগর উপজেলার পুরুন্তপুর গ্রাম থেকে কাঠের তৈরি খেলনা এনেছেন আনেস মিয়া। প্রথম আলোকে জানান, বাপ–দাদার সময় থেকে মহররমের এই মেলায় কাঠের খেলনা বিক্রি করে আসছেন তাঁরা। মেলাটি দুই দিন হলে আরেকটু বেচাকেনা করা যেত।

সকালে মেলায় গিয়ে দেখা গেল, পণ্যের পসরা নিয়ে এসেছেন আরও নানা গ্রামের ব্যবসায়ীরা। মিষ্টান্ন, খেলনা, চুড়ি, ফিতা, আলতা থেকে ঘর–গৃহস্থালির বিচিত্র জিনিস। জিলাপিই ভাজা হচ্ছে ৫০টির বেশি দোকানে। বিক্রিও হচ্ছে দেদার। কারণ মেলা শেষে যে জিলাপি কিনেই বাড়ি ফিরতে হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে নাগরদোলা। আর আছে ঝুড়ি (কানমুচরি)—এ মেলার ঐতিহ্য।

মেলায় এসেছেন গাংনী উপজেলার ফারুক আহসান। তিনি বললেন, ‘পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কুতুবপুরের মহররমের এই মেলাটি। এখনো কত দর্শনার্থী। আমি আসি ঐতিহ্যবাহী চিকন জিলাপি গরম গরম নিতে।’

মেলাটা শুধু মেলা প্রাঙ্গণেই সীমিত নয়, এ উপলক্ষে জামাতা ও আত্মীয়স্বজনকে আমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করার রেওয়াজও যথারীতি চলেছে। বাড়িতে বাড়িতে বানানো হয়েছে খই, মুড়কি, নারকেলের ও চালের আটার নাড়ু। মেলা থেকে দই কিনে নিয়ে মুড়কি দিয়ে খাওয়ার রেওয়াজটিও ধরে রেখেছেন এলাকাবাসী।

প্রবীণ খাতেজান নেছা বলেন, ‘মেলা থেকে আগে পেতাম মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখার জন্য পাটের তৈরি শিকি (শিকা)। সেই শিকি এখন আর নেই।’

মেলাটির আয়োজক কমিটির সভাপতি আফরাজুল হক বললেন, ১০ মহররম মেলাটি হয়ে থাকে। এ জন্য আগাম কোনো ঘোষণা দেওয়া হয় না। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে একই দিনে মেলাটি বসছে। দূরদূরান্তের মানুষ এখনো আসছে মেলায় যোগ দিতে। সে কারণে সব রকমের সুবিধা রাখতে আয়োজক কমিটি প্রায় এক মাস আগে থেকে সব প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এবারও সে রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মেলার নিরাপত্তার জন্য সারা দিন পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।

কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলার ইতিহাস ধরে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে কুতুবপুর গ্রাম। প্রতিবছর তাঁরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে অব্যাহত রেখেছেন এই মেলাটির আয়োজন।